কোনো ভয়ভীতি ছাড়াই যেকেউ অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘নিজেদের কার্যক্রম নিয়ে সরকারকে প্রায়ই সমালোচনার মুখে পড়তে হয়, এটিই বর্তমান প্রশাসনের সফলতা। কেউ বর্তমান সরকারের সমালোচনা করতে ভয় পান না।’
বুধবার (২০ মার্চ) রাজধানীর গুলশান শুটিং ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইফতার ও নৈশভোজে অংশ নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সবার প্রতি প্রশ্ন রেখে উপদেষ্টা বলেন, ‘বছরখানেক কিংবা আট মাস আগে ক্ষমতাসীন সরকারের সমালোচনা কী আপনি করতে পারতেন, যেটা আপনি বর্তমানে করতে পারছেন? যদি আর কিছু না হয়, তবুও সরকারের অন্তত একটি সফলতা হচ্ছে, যে কেউ ইচ্ছা করলেই নির্ভয়ে সরকারের সমালোচনা করতে পারেন। এটাই গণতন্ত্রের মূলকথা।’
এ সময়ে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন, বিম্সটেক সেক্রেটারি জেনারেল ইন্দ্রা মনি পান্ডে, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার জি খোজিন, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়াং-সিক, জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা সিনিচি, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ, সিনিয়র সাংবাদিক ও ডিক্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: দুই মাসের মধ্যে তুলাকে কৃষি পণ্য ঘোষণা করা হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতীয় জীবনের এক কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ। জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুসারে সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। তবে অন্তর্বর্তী সরকার সব আকাঙ্ক্ষাই যে পূরণ করতে পারছে, তা বলছি না। তবে এমন একটি পথ তৈরি করতে হবে, যা সত্যিকার অর্থে বৈষম্যমুক্ত এবং গণতান্ত্রিক সমাজের চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে যাবে দেশকে।’
‘কিছু কিছু সংস্কার নির্বাচনের আগেই করতে হবে। যেটা সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে চেষ্টা করছে, যাতে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়। আর কিছু সংস্কার পরবর্তী সময়ে অব্যাহত থাকবে,’ বলেন তিনি।
ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘গেল ২৭ বছর ধরে বিভিন্ন জটিল ইস্যুতে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া—দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক—এগিয়ে নিতে সামনের সারিতে ছিল ডিক্যাব।’
‘সামনের দিনগুলোতে, বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি জনগণ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন ডিক্যাব সদস্যরা,’ বলেন তিনি।
এ কে এম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও শক্তিশালী গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে, তখন পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে নিজেদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে ডিক্যাব।’
‘আসুন আমরা বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক উত্তরণের স্বপ্ন দেখি, যা আমাদের জাতির দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা এবং সাফল্যের জন্য অপরিহার্য,’ তিনি বলেন।