শিক্ষাঙ্গন ও কর্মস্থলে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে এক যুগেরও বেশি সময় আগে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাস্তবায়ন চেয়ে রিট করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসকের) পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. শাহিনুজ্জামান ও সৈয়দা নাসরিন রিটটি করেন। রিটে জনপ্রশাসন সচিবসহ ৪৩ জনকে বিবাদী করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বিচারপতি মো.মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল ইসলাম মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।
পরে মো.শাহিনুজ্জামান জানান,২০০৯ সালে হাইকোর্ট যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি গাইডলাইন দেন। এতে সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি করে কমিটি গঠনসহ বেশ কিছু নির্দেশনা ছিল। কিন্তু সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন নেই। এমনকি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতেও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কোন কমিটি নেই। এজন্য ওই রায় বাস্তবায়নের নির্দেশনা চেয়ে আমরা রিট করেছি।
জানা যায়,বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট কর্মস্থল এবং শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশুদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট বিভাগে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেন। শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট রায় দেন। এ রায়ে হাইকোর্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ নামে কমিটি গঠন করার আদেশ দেন।
হাইকোর্টের এ রায়ের পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ইউজিসি একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই যৌন নির্যাতন বন্ধে মাধ্যমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রের কঠোর নির্দেশ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: খুবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে সহকর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ!
হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, কমিটিতে কমপক্ষে পাঁচজন সদস্য থাকবে। এ কমিটির বেশিরভাগ সদস্য হতে হবে নারী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে দু’জন সদস্য নিতে হবে। আরও বলা হয়,সম্ভব হলে একজন নারীকে কমিটির প্রধান করতে হবে। এ বিষয়ে সচেতনতা ও জনমত তৈরির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে,সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি শিক্ষাবর্ষের পাঠদান কার্যক্রমের শুরুতে এবং প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সংবিধানে বর্ণিত লিঙ্গীয় সমতা ও যৌন নিপীড়ন সম্পর্কিত দিক নির্দেশনাটি বই আকারে প্রকাশ করতে হবে।
হাইকোর্টের এ নির্দেশনা আইনে রূপান্তর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ নির্দেশনাই আইন হিসেবে কাজ করবে এবং সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নীতিমালা প্রযোজ্য হবে।
হাইকোর্টের রায়ে যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞায় বলা হয়, শারীরিক ও মানসিক যে কোনো ধরনের নির্যাতনই যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে। ই-মেইল, এসএমএস, টেলিফোনে বিড়ম্বনা, পর্নোগ্রাফি, যে কোনো ধরনের অশালীন চিত্র,অশালীন উক্তিসহ কাউকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে সুন্দরী বলাও যৌন হয়রানির পর্যায়ে পড়ে।
শুধু কর্মস্থল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এ ধরনের হয়রানি ঘটে না, রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের অশালীন উক্তি,কটূক্তি করা,কারও দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো ইত্যাদিকে যৌন হয়রানি হিসেবে গণ্য করা হবে। রায়ে বলা হয়, কোনো নারীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, যে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগ করা,মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সম্পর্ক স্থাপন,অশালীন চিত্র,দেয়াল লিখন, আপত্তিকর কিছু করাও যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।
আরও পড়ুন: চাঁদপুরে হাসপাতালে ভর্তির সময় কিশোরীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ!
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ও র্যাগিং বন্ধে হাইকোর্টে রিট