আসন্ন ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এবার রাস্তায় পশুর হাট বসতে দেয়া হবে না। আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রবিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুক্তিযদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী বলেন, রাস্তার ওপর পশুর হাট, হাটে যে খাজনা নেয়া হয় বা হাসিল, পশুর ট্রাকে বাঁধা দিয়ে চাঁদাবাজি, জোর করে হাটে পশু নামানো এ বিষয়গুলো বৈঠকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশাসন যেন সতর্ক থাকে কোন ব্যবসায়ী বা ক্রেতাদের যাতে ভোগান্তিতে পড়তে না হয়।
তিনি বলেন, যত্রতত্র যাতে পশুর হাট না বসে।অনেক সময় দেখা যায়, ঢাকার বাইরেও রাস্তার পাশে হাট বসছে। ফলে গাড়ি চলাচল করতে পারছে না। কাজেই রাস্তার পাশে কোন অবস্থায় সাময়িকভাবেওযেনো কোরবানির পশু বিক্রি না হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, এখন থেকেই বড় সাইনবোর্ড থাকবে টোল রেট (হাসিল) কতো। তারা তাদের ইচ্ছা মতো নেয়। শতকরা হার কতো তা হাটে চার্টটা দৃশ্যমান থাকতে হবে। পত্রপত্রিকার মাধ্যমেও ব্যাপক প্রচার প্রচারণা করা হবে। যাতে বেশি নিতে না পারে সে জন্য সেখানে (পশুর হাট) ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে।
তিনি বলেন, পশুর চামড়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। দুই বছর আমরা লক্ষ্য করেছি মানুষ চামড়ার ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। আমাদের দেশে প্রসেসিংয়ের ব্যবস্থাটা নেই, কাঁচা চামড়া বিদেশে বিক্রি করা যায় না। মধ্যস্বত্ব ভোগীরাই সব সুবিধা ভোগ করে। যারা চামড়া বিক্রি করে তারা খুব কম দাম পায়।
আরও পড়ুন: চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেড় লাখের বেশি কোরবানি পশু প্রস্তুত: জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয় অচিরেই সভা করে চামড়ার রেট ঘোষণা করবে। আগামী দুই দিনের মধ্যে শিল্প ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সাভারের চামড়া শিল্প নগরী পরিদর্শন করবেন। যাতে ওখানকার কারখানাগুলো ইফেক্টিভলি রান করতে পারে। কোনো অজুহাত যাতে ব্যবসায়ীরা দাঁড় করাতে না পারে, সেটা দেখার জন্য।
একই সঙ্গে মিলকারখানার মালিকদের জন্য আমাদের পরামর্শ সময়ের মধ্যে যেনো তাদের শ্রমিকরা বেতন-ভাতা, তাদের প্রাপ্য পেয়ে যায়। টাকা পয়সার জন্য তাদের মধ্যে যেনো কোনো অসন্তোষ সৃষ্টি না হয়। স্থানীয় প্রশাসন আগে থেকেই এসব মিল কলকারখানা খবর নিতে থাকবে।
পদ্মা সেতুসহ দেশের অন্যান্য সেতু, ওভারব্রিজে ডিজিটাল টোল ব্যবস্থা চালুর করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন পরেই ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর আমরা দেখেছি পদ্মা সেতুতে অনেক টোল আদায় হচ্ছে। এই টোল দিতে অনেক কষ্ট হয়। কারণ ম্যানুয়ালি সংগ্রহ করা হয়।
'আসন্ন ঈদে হাজার হাজার গাড়ি যাবে। তখন দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। তাই এই ঈদে কিছু করা যাবে না। ভবিষ্যতের জন্য সারা দেশে যাতে অটোমেশন টোলের ব্যবস্থা করা যায়, এ জন্য আমাদের প্রত্যেকের গাড়িতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস স্থাপন করতে হবে। এতে করে কাউকে আর ম্যানুয়ালি টোল দিতে হবে। এই ব্যবস্থা দ্রুত চালুর জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছি' বলেন আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নয়, দেশের অন্যান্য সকল সেতুতে যেখানে টোল দেয়া হয় সেখানেই মানুষের অনেক কষ্ট হয়। এ জন্য সেতুর সুফলটা মানুষ ঠিক মতো পায় না। তাই ব্রিজ ও ওভারব্রিজের সুবিধা পেতে হলে দ্রুত ডিজিটাল টোল ব্যবস্থায় যেতে হবে। তাহলে মানুষ এর সুবিধা পাবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটি গাড়িতে এই ব্যবস্থা করতে হবে। যেটা আমরা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে দেখে থাকি। এ বিষয় আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
এ সময় তিনি আরও জানান, বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। তবে যে পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে থাকবে, সে সময়ে কোনো অপরাধ করলে কি আইনে ব্যবস্থা নেয়া যায়। সে বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে ৪৪০০টির বেশি পশুর হাট বসবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী