আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় দেশে ফিরেছেন লেবাননে অসহায় অবস্থায় থাকা ১৮ জন বাংলাদেশি। বাংলাদেশ ও লেবানন সরকারের সাথে সমন্বয় করে শুক্রবার ভোরে (৩ সেপ্টেম্বর) তাদের দেশে ফিরিয়ে আনে সংস্থাটি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইওএম জানায়, লেবানন ত্যাগের পূর্বে এসব অভিবাসীর কোভিড-১৯ পরীক্ষাসহ ভ্রমণপূর্ব পরিবহন সহায়তা এবং মনোসামাজিক সেবার পাশাপাশি সুরক্ষামূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে আইওএম। বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর তাদেরকে বাড়ি ফেরার খরচসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেয়া হয়। এসব অভিবাসীদের ভবিষ্যতে পুনরেকত্রীকরণেও সহায়তা দেবে জাতিসংঘের সংস্থাটি।
লেবাননে বিভিন্ন দেশের এক হাজারের বেশি অভিবাসীর ওপর পরিচালিত আইওএম’র সাস্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, তাদের প্রায় অর্ধেকই দেশে ফিরতে চান। এর কারণ রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সরকারের পদত্যাগের ফলে সৃষ্ট গভীর অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক অচলাবস্থায় লেবাননের পরিস্থিতি ক্রমশ আরও খারাপের দিকে যাওয়া। তাই ওই দেশে থাকা দূতাবাসগুলোতে দেশে ফিরতে চাওয়া অভিবাসীদের আবেদনের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে।
আইওএম পরিচালিত ওই জরিপে দেখা যায়, লেবাননে চলমান সঙ্কটের প্রভাবে অনেকেই চাকরি এবং জীবিকা হারিয়েছেন। ঠিকমতো বেতন না দেয়া, অন্যায়ভাবে ছাঁটাই করা এবং চুক্তি লঙ্ঘন-এর মতো শোষণমূলক আচরণ করছেন নিয়োগকর্তারা। ফলে অভিবাসীরা কঠিন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ভারতে পাচার হওয়া ৭ তরুণী দেশে ফিরলেন
সৌদি থেকে ৬ মাসের সন্তান নিয়ে দেশে ফিরলেন গৃহকর্মী
আইওএম’র সহায়তায় ফিরে আসা এক অভিবাসী বলেন, ‘লেবাননে বসবাস করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ আমরা না পারছি নিজেদের মৌলিক চাহিদা পুরণ করতে, না পারছি দেশে থাকা পরিবারকে কোনো ধরনের সহায়তা করতে। লেবাননে থাকা অভিবাসীদের বেঁচে থাকা এবং দেশে ফেরার জন্য সহায়তা প্রয়োজন। আমাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করায় আইওএম-সহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি।’
আইওএম’র লেবানন প্রধান ম্যাথিউ লুসিয়ানো বলেন, ‘অনেক অভিবাসী আইওএম’র সহায়তার জন্য আসছেন। তারা চাকরি হারিয়েছেন। অভিবাসীরা ক্ষুধার্ত। তারা কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না এবং অনিরাপদ বোধ করছেন। অনেকে দেশ ফেরার জন্য মরিয়া, কিন্তু কোনো উপায় পাচ্ছেন না।’
তিনি বলেন, ‘দ্রুত জরুরি সহায়তা জোরদার করার পাশাপাশি স্বেচ্ছায় মানবিক প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা বাড়ানো দরকার।’
আইওএম’র বাংলাদেশ মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সঙ্কটের সাথে কোভিড-১৯ মহামারি যুক্ত হয়ে লেবাননে থাকা বাংলাদেশি অভিবাসীদের ঝুঁকি আরও বহুগুণে বাড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অসহায় অভিবাসীদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের পুনরেকত্রীকরণের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার, দাতা সংস্থা এবং অংশীদারদের সাথে কাজ করে যাবো।’
লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর (শ্রম) এবং হেড অব চ্যান্সেরি আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশি অভিবাসীদের দেশে ফিরতে সহায়তা করায় আইওএমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘অসহায় অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে অংশীদারিত্ব এবং পারষ্পরিক সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’