শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য হিসেবে ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে নিজ দায়িত্ব পালন করে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈঠক শেষে এ কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. ইশফাকুল হোসেন।
সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্য এবং অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
ইশফাকুল হোসেন বলেন, মন্ত্রী আলোচনায় শিক্ষকদের প্রতি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি উপাচার্যকে তার দায়িত্ব পালন করে যেতে বলেছেন।
এ সময় কোষাধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রী বলেছেন, উপাচার্যের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছে, তার তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে রাষ্ট্রপতিই সব সিদ্ধান্ত দেবেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিবসটি যেন যথাথতভাবে পালন করা হয় সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
এর আগে বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউজে বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি ভিসিকে অপসারণের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির ওপর নির্ভর করে: দীপু মনি
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তবে ভিসির পদত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আচার্য (রাষ্ট্রপতি)। এ বিষয়টি আচার্যের কাছে তুলে ধরা হবে। অন্যান্য দাবি পূরণ করা হবে পর্যায়ক্রমে।
তিনি বলেন, ‘তাদের (শিক্ষার্থী) যা যা বক্তব্য আছে, পুরো ঘটনা সম্পর্কে তাদের কী বলার আছে, তা সব বর্ণনা করেছে। তাদের সঙ্গে ভালো আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের কথা বুঝতে চেষ্টা করেছি।
এরপর মন্ত্রী উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষক ও উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে কিছুই বলেননি দীপু মনি। প্রায় ১৫ মিনিটের আলোচনা শেষে উপাচার্যের বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।
এরপর মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে জানান। সেইসঙ্গে দাবি পূরণে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাসও দেন।
বিকেলে সার্কিট হাউসে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা মোট আটটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ, ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার, আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর বন্ধ থাকা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু করা, পুলিশের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা দেয়া ও তার জন্য নবম গ্রেডের চাকরি নিশ্চিত করা, মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হককে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানো, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর করা, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি এবং ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবির নতুন প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল
শাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের শুরু ১৩ জানুয়ারি। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ’ ছাত্রী।
১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেন।
২৬ জানুয়ারি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে তারা এক সপ্তাহের অনশন ভাঙেন। সে সময় সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য জাফর ইকবালের কাছে তারা পাঁচটি দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো ছিল—উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগসহ ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণ, ক্যাম্পাসের সব আবাসিক হল সচল রাখার বিষয়ে উদ্যোগ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া, পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর জামিন ও অজ্ঞাতনামা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং অনশনরত শিক্ষার্থী ও উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ভার বহন।
এর মধ্যে সেদিনই জামিন পান গ্রেপ্তার সাবেক শিক্ষার্থীরা, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খরচও দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপর গত রবিবার ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক পদ থেকে অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সবশেষ প্রক্টর আলমগীর কবিরকে বৃহস্পতিবার রাতে অব্যাহতি দেয়া হয়।