নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কেন মামলা করা হয়েছে তার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের পাওনা কিংবা অধিকার বুঝিয়ে না দেওয়ায় একজন নোবেল জয়ীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার বিষয়ে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন তিনি।
সোমবার (১ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘শরণার্থীর জবানবন্দী ১৯৭১’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মত িবিনিময়কালে এসব কথা বলেন।
নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার রায় প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে অনেক নোবেলজয়ী ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেকে জেলও খেটেছেন। ড. ইউনূসের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাচ্ছি, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে না-দেওয়ার জন্য। তিনি শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেননি, বহু বছর ধরে।
তিনি বলেন, ‘এরপর যখন শ্রমিকরা আদালতে গেছেন, তখন আদালতের বাইরে দুজন শ্রমিক নেতাকে ৩ কোটি করে ৬ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘দুজন শ্রমিক নেতা টাকা পেলে তো হবে না, কারণ সাধারণ শ্রমিকরা তো কোনো টাকা পাননি। সে কারণে সাধারণ শ্রমিকরা মামলা করেছেন। সেই মামলার রায় হচ্ছে। এখন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে নানা কথা হয়। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে অনেক বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও অনেক কথা বলেন।’
নোবেলজয়ী যদি শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে না দেন, তাহলে কি তার বিরুদ্ধে মামলা হবে না- এমন প্রশ্নও তোলেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আশা করি, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও এ নিয়ে কথা বলবেন। শ্রমিকের অধিকার ও পাওনা বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে মামলা হয়েছে।
হাছান বলেন, ‘মালালা ইউসুফজায়ী ১২ বা ১৪ বছর বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন। কখন আট বছরের ছেলেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়, সেটির আশঙ্কাও লোকজন করছেন।’
আরও পড়ুন: তিন কাঠা জমি থাকলেই কোটিপতি: তথ্যমন্ত্রী
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) বক্তব্যে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা মোটেও বিরক্ত হই না। মানবাধিকার নিয়ে কথা বললে, সেগুলো আমরা দেখি, পর্যবেক্ষণ করি, অনেক ক্ষেত্রে সত্য ঘটনা হলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন, তারা পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস নিয়ে কোনো কথা বলে না কেন? তারা ফিলিস্তিনের হাজার অসহায় নারী-শিশুকে যেভাবে ইসরাইলি বাহিনী হত্যা করছে, তা নিয়ে কথা বলেন না কেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিএনপি ঘরানার কয়েকজন লোকের মানবাধিকার নাকি দেশের প্রতিটি মানুষের মানবাধিকারের কথা তারা বলছেন? মানবাধিকার নিয়ে কথা বললে সারা দেশের প্রেক্ষাপটে বলতে হবে। আজ যে মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে, মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে ব্যহত করা হচ্ছে, সেটাও মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ।’
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করে, বিএনপি মানুষ পোড়ায়: তথ্যমন্ত্রী
তিনি বলেন, ‘এগুলো নিয়ে তারা কথা বলে না কেন! সেটি নিয়ে কথা যখন বলেন না, তখন আমরা বিরক্ত হই। কিন্তু মানবাধিকার নিয়ে কেউ কথা বললে আমরা বিরক্ত হই না।’
‘প্রার্থীদের ওপর বিএনপি হামলা চালাতে পারে’ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা জানি, তারা প্রার্থীদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছেন, যাতে ভোটটা বন্ধ হয়ে যায়। প্রার্থীদের ওপর হামলা করবে, হত্যা করবে, যাতে ভোট বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘কোনো একটি নির্বাচনী এলাকায় যদি কোনো প্রার্থী মারা যান, তাহলে সেই নির্বাচনটা বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে বিএনপি এমন পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তাতে লাভ হবে না। তাদের সব পরিকল্পনা সন্ত্রাসীমূলক। এখন তারা প্রার্থীদের ওপর হামলা পরিকল্পনা করেছে। জঘন্য সন্ত্রাসী সংগঠন ছাড়া কেউ সেটা করে না।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনী জোয়ারে বিএনপির নেতা-কর্মী সমর্থকরাও শামিল হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী