প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার কিছু মহলের কঠোর সমালোচনা, অপমান ও উপহাস সত্ত্বেও দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছি। কিন্তু শুরুতে আমাদের কঠোর সমালোচনা, অপমান ও উপহাসের সম্মুখীন হতে হয়েছে। যখনই সমস্যা বা সংকট দেখা দিয়েছে, অনেকেই আমাদের উপহাস করেছেন। বলেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে এটা হয়েছে।’
শনিবার (২৯ জুলাই) বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট ২০২৩-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দুই দিনব্যাপছ্সিম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ফ্ল্যাগশিপ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের শিক্ষার মান উন্নত করুন: প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় আওয়ামী লীগ যখন তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছিল, তখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তিনি বলেন, ‘তখন আমাদের চরম উপহাসের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমরা দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট বিষয়ক চিন্তাভাবনা, ব্লকচেইন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা ও সাইবার নিরাপত্তার মতো আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য তার সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে
তিনি বলেন, তারা প্রতিটি উপজেলায় বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করছে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে।
আরও পড়ুন: বিচার বিভাগকে স্মার্ট করতে পদক্ষেপ নিয়েছি: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, সরকারের প্রচেষ্টায় স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড এ পর্যন্ত ৩০টি বিনিয়োগ সম্পন্ন করেছে এবং ‘শত বর্ষে শত আশা’প্রচারের আওতায় ১০০টি স্টার্টআপ বিনিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।
এর মাধ্যমে ১৫ লাখের বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯২ লাখ মানুষ সেবা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, যাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ নারী।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জাতীয় স্টার্টআপ নীতিমালা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ স্টার্টআপ ফান্ড প্রণয়ন করেছে। এর মাধ্যমে দেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইকোসিস্টেম গড়ে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে এখন পর্যন্ত ৯২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে পাঁচটি ইউনিকর্ন তৈরিতে সহায়তা করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫৪০টি ইউনিকর্ন তৈরি করা লক্ষ্য।
তিনি বলেন, কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের একটি স্টার্টআপ কোম্পানিকে ইউনিকর্ন বলা হয় এবং একটি ইউনিকর্ন স্টার্টআপ লাখ লাখ লোকের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ, স্মার্ট ও বুদ্ধিমান জনশক্তি তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্টার্টআপে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: আ.লীগের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধি তুলে ধরুন: নেতা-কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
ই-কমার্স মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ এলাকার ফ্রিল্যান্সাররা ৫০ কোটি ডলারের বেশি আয় করছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে দেশের তরুণরাই হবে মূল শক্তি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের তরুণরা হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে দক্ষ জনশক্তি, গড়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ।’
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইসিটি বিভাগের সচিব মো. শামসুল আরেফিন এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ।
পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষে নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক এবং এসবিকে টেক ভেঞ্চারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
দুই দিনব্যাপী এই ইভেন্টের লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন দেশের স্টার্টআপ, উদ্যোগ, ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট, বিনিয়োগকারী, নিয়ন্ত্রক, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও বিশেষজ্ঞদের একত্র করা।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ এক্সিলারেটর প্রোগ্রাম উন্মোচন করেন, ভারত-বাংলাদেশ স্টার্টআপ ব্রিজ ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন এবং স্মার্ট বাংলাদেশ স্টার্টআপ ফান্ড চালু করেন।
তিনি বিজয়ীদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট এবং বাংলাদেশ স্টার্টআপ অ্যাওয়ার্ডও তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হয়।