রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ শুক্রবার সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সংসদীয় ব্যবস্থায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সংসদের সামগ্রিকভাবে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও ভূমিকা রয়েছে। প্রথমত, শ্রেণী, পেশা ও লিঙ্গ নির্বিশেষে সমাজের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করা; দ্বিতীয়ত, আইন প্রণয়ন এবং সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং তৃতীয়ত তদারকির মাধ্যমে নির্বাহী শাখার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলোকে সত্যিকার অর্থে কার্যকর করতে পারলে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যাবে।
শুক্রবার জাতীয় সংসদের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘বিশেষ অধিবেশনে’ ভাষণ দানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
‘উন্নয়ন ও গণতন্ত্র তাল মিলিয়ে এগিয়েছে'- লক্ষ্য করে তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র বিরাজ করলেই উন্নয়ন ও অগ্রগতি এগিয়ে যায়। আবার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অভাবে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
উন্নয়নকে স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে বিকাশের জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক চর্চাকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে যে উন্নয়ন হয় তা কখনই সর্বজনীন হতে পারে না। এ ধরনের উন্নয়ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেশে ফেরার পরপরই বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক লক্ষ্যে একটি সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনার কাজ শুরু করেন। জনগণের মুক্তি। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি দেশকে শূন্য থেকে স্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।’
আরও পড়ুন: সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান ছড়িয়ে দিন: রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু শহীদ না হলে দেশ অনেক আগেই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতো। ১৯৭৫ সালের পর বহু বছর উন্নয়ন ও গণতন্ত্র অবরুদ্ধ ছিল।
সংসদকে কার্যকর করতে সকল সংসদ সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনীতিতে মত, নীতি ও আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে। তবে সংসদকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার বিষয়ে কোনো ভিন্নমত থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, এই সংসদকে জনগণের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা দল-মত নির্বিশেষে সকল সদস্যের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র কোনো আমদানি-রপ্তানিযোগ্য পণ্য বা সেবা নয়।
হামিদ বলেন, ‘আমাদের মনে হলে অন্য দেশ থেকে পছন্দের পরিমাণে গণতন্ত্র আমদানি বা রপ্তানি করা’ এর সারমর্ম নয়। গণতন্ত্র বিকাশ লাভ করে এবং চর্চার মাধ্যমে শক্তিশালী হয়।’
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সংসদীয় কার্যক্রমে লিপিবদ্ধ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য অধ্যয়ন করলে সংসদকে কীভাবে প্রাণবন্ত ও কার্যকর করা যায় তা আমরা শিখতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, কীভাবে বিরোধী দলকে আস্থায় নেওয়া যায় এবং অন্যদের সম্মান করা যায়, বঙ্গবন্ধু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা ভাগ্যবান যে আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো বৈশ্বিক মর্যাদার একজন কিংবদন্তী নেতা পেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা তাকে ধরে রাখতে পারিনি।’
আরও পড়ুন: টেকসই উন্নয়নের জন্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিন: রাষ্ট্রপতি
নবনির্বাচিত স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে অভিনন্দন জানানোর সময় তিনি পঞ্চাশ বছর আগে প্রথম সংসদের প্রথম অধিবেশনে সংসদ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বক্তব্যের কথা স্মরণ করেন।
রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলেন, সংসদ সদস্যরা আপনাদের দায়িত্ব পালনে সব সময় সহযোগিতা করবেন।
বঙ্গবন্ধু আশা প্রকাশ করেন যে ঐতিহ্যবাহী সংসদীয় রীতিনীতি মেনে কার্যক্রম নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হবে এবং তাদের কাছ থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা পাবেন।
সেসময় সংসদ নেতা শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘আপনাদের মনোযোগ দিতে হবে যাতে এই সংসদের মর্যাদা সমুন্নত থাকে, কারণ আমরা যে ইতিহাস তৈরি করেছি তাতে কোনও ত্রুটি থাকা উচিত নয়।’
হামিদ বলেন, দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে
গত দেড় দশক ধরে শাসন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার কারণে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ এখন অগ্রগতির এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’
বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশন শুরু করেছে বাংলাদেশ সংসদ।
এটিও একাদশ জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশন।
সংসদ সদস্যদের আলোচনা সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর একটি প্রস্তাব জাতীয় সংসদে গৃহীত হবে।
১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ তার প্রথম অধিবেশন বসে।
আরও পড়ুন: মেডিকেল কলেজকে টাকা বানানোর যন্ত্রে পরিণত করা উচিত নয়: রাষ্ট্রপতি