বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে সিঙ্গাপুরকে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন পারস্পরিক সুবিধার জন্য সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে আরও বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য (এফডিআই) প্রত্যাশা করেছেন।
বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সিঙ্গাপুরের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আরএমজি, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়া ও পাটজাত পণ্য, সিরামিক, প্লাস্টিক, বাইসাইকেল ইত্যাদি আমদানির জন্য একটি উৎস দেশ হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আহ্বান জানান। যা আরো ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলবে।
বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে তৃতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ মোমেন এবং পাঁচ সদস্যের সিঙ্গাপুর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় স্থায়ী সচিব (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) এবং স্থায়ী সচিব (আইন মন্ত্রণালয়) লুক গোহ।
উভয় পক্ষ প্রস্তাবিত দ্বিপক্ষীয় এফটিএ-এর পরিপ্রেক্ষিতে অগ্রগতির পর্যালোচনা করেছে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে তার কাঙ্ক্ষিত স্তরে উন্নীত করতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটি শেষ করার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছে।
এ বিষয়ে সম্প্রতি সই হওয়া সহযোগিতা স্মারক (এমওসি) এর অধীনে গঠিত বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের নিয়মিত কার্যক্রমের প্রশংসা করেন উভয় পক্ষ।
আরও পড়ুন: নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়: চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও
বাংলাদেশ এবং সিঙ্গাপুর পারস্পরিক সুবিধার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতার বর্তমান গতিতে আরও গতি যোগ করার লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করতে এবং বিদ্যমান পরিপূরকগুলোকে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আট বছরেরও বেশি সময় বিরতির পরে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সংযোগ, সমুদ্র অর্থনীতি, হালাল বাণিজ্য, পর্যটন ও সংস্কৃতি, সক্ষমতা উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কৃষি, আইসিটি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সহ পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বিষয়গুলো ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করেছে এফওসি।
উভয় পক্ষ চলমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গতিশীল করতে আরও উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের গুরুত্ব উল্লেখ করেছে। উভয় পক্ষই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে যে এফওসি সামনের দিনগুলোতে এটিকে আরও সহযোগিতামূলক, উল্লেখযোগ্য এবং অর্থবহ করার জন্য বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে আরও জোরালো ও গতি আনতে সাহায্য করবে।
উভয় পক্ষ এফওসি এবং অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়া চলাকালীন গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোতে পর্যাপ্ত ফলোআপের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে।
দুই পক্ষই কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং কৃষি গবেষণা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।
উভয় পক্ষই প্রশংসা করেছে যে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকরা উভয় দেশের অর্থনীতিতে প্রশংসনীয় অবদান রাখছে। সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির গতি বজায় রাখতে ওয়েল্ডার, মেডিকেল টেকনিশিয়ান, নিরাপত্তা কর্মী, উদ্যানপালক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কৃষিকর্মী, গৃহকর্মী ইত্যাদি খাতে কর্মী পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করতে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের পরামর্শকে না বলেছে বাংলাদেশ: মোমেন
প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান আদান-প্রদানের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর থেকে বৃহত্তর সহযোগিতার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ মোমেন বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দ্রুত প্রত্যাবাসন সম্ভব করার জন্য দ্বিপক্ষীয়ভাবে এবং আসিয়ান কাঠামোর মধ্যে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য সিঙ্গাপুরকে অনুরোধ করেন।
তিনি আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশকে দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানান।
এর আগে, বাংলাদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত ডেরেক লো, সফররত সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধি দলের পক্ষে, জাতীয় শোক দিবসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমারে প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়াও বনানীর কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রদূত।
আরও পড়ুন: ব্রিকসে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি নির্ভর করছে সদস্যদের উপর: পররাষ্ট্রমন্ত্রী