পাঁচ দফা দাবিতে সিলেট বিভাগজুড়ে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। ধর্মঘটের কারণে সোমবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের যান চলাচল। যাত্রীবাহী যানবাহনের পাশাপাশি পণ্যবাহী যানবাহনও বন্ধ রয়েছে।
আচমকা ডাকা এ ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে এসএসসিসহ অন্যান্য পরীক্ষার্থী, রোগী, বিদেশযাত্রী এবং জরুরি সেবার গাড়িগুলোকে ধর্মঘটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
সকাল থেকে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে অভ্যন্তরীণ বাসের পাশাপাশি সিলেট থেকে দূরপাল্লার কোনো বাসও ছেড়ে যায়নি। সেই সাথে সড়কে শ্রমিকদের পিকেটিং করতেও দেখা যায়। তবে সকাল থেকেই নগরীতে প্রাইভেট যান চলাচলের সংখ্যা বেড়েছে।
এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দক্ষিণ সুরমার কদমতলীসহ সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুতে টোল আদায় বন্ধ, নগরের ভেতরে ছোটো গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করাসহ ৫ দফা দাবিতে রবিবার এ ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
আরও পড়ুন: সোমবার থেকে সিলেটে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট
এর আগে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ৫ নভেম্বর থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা।
অন্যদিকে শ্রমিকদের ঘন ঘন ধর্মঘটের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।
সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মনালে দাঁড়িয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা হোসেন আহমদ। প্রতিদিন সিলেট থেকে তিনি গোয়ালবাজারে অফিস করতে যান।
তিনি বলেন, কিছু হলেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘট ডেকে বসেন। আমাদের জিম্মি করে তারা নিজেদের দাবি আদায় করতে চান। এটা খুবই অনায্য। আইন করে জরুরি সেবা পরিবহন খাতের ধর্মঘট বন্ধের দাবি জানান তিনি।
আগের ধর্মঘটে মাইক্রোবাস, অটোরিকশা চলাচল করলেও এবার সেগুলোও বন্ধ রয়েছে। ফলে অনেকটাই অচল হয়ে পড়েছে সিলেট। এতে যাত্রী দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সরকার বলেন, আমরা একাধিকবার বৈঠকে বসে আমাদের দাবির কথা বলার পাশাপাশি স্মারকলিপিও দিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। সেসব দাবি মানার কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। আমাদের দাবি যতসময় মেনে নেয়া না হচ্ছে ততক্ষণ অবরোধ চলবে। সিলেট থেকে অভ্যন্তরীণ বাস চলাচলা বন্ধের পাশাপাশি দূরপাল্লার বাস চলাচলও বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: পণ্য পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত
তিনি বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘট চললেও আমরা আমাদের কর্মীদের বলে দিয়েছি- এসএসসিসহ অন্যান্য পরীক্ষার্থী, রোগী, বিদেশযাত্রী এবং জরুরি সেবার গাড়িগুলোকে ছেড়ে দিতে। তবে অন্য কোনো গাড়ি রাস্তায় চলতে দিবো না আমরা।’
শ্রমিকদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো- সিলেট জেলা অটোটেম্পু ও অটো রিকশাচালক শ্রমিক জোটের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা এবং প্রহসনমূলক নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তথাকথিত ঘোষিত কমিটি বাতিল করা ও মনোনয়ন ফি বাবদ আদায় করা টাকা ফেরত দেয়াসহ সিলেটের আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপপরিচালককে প্রত্যাহার; সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ওপর কোতোয়ালি থানায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার; সিলেটের ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের হয়রানি বন্ধ; মেয়াদোত্তীর্ণ সেতুতে (শেরপুর সেতু, শেওলা সেতু, লামাকাজী সেতু, ফেঞ্চুগঞ্জ সেতু ও শাহপরান সেতু) টোল আদায় বন্ধ এবং সিলেটের চৌহাট্টাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ ছোট গাড়ির জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা।