যুক্তরাজ্য প্রবাসী গ্রাহকের এফডিআর-এর ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় সিলেটে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ মামলা করা হয়েছে।
নগরীর উত্তর পীরমহল্লার বাসিন্দা প্রবাসী সৈয়দ আখলাক মিয়া গত ১২ জানুয়ারি দুপুরে সিলেট জেলা যুগ্ম জজ আদালতে এ মামলা করেন।
মামলায় সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়াও ব্যাংকের সিলেটের বন্দরবাজার শাখার উপ মহা-ব্যবস্থাপক (ডিজিএম), জিন্দাবাজার শাখার ব্যবস্থাপক, জিন্দাবাজার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান শাখার ডেপুটি গভর্নরকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বাদী তার আর্জিতে এফডিআর’র আত্মসাত করা মূল টাকা, লভ্যাংশ ও মানহানির ঘটনায় ১২ কোটি ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দাবি করেছেন।
আরও পড়ুন: ঋণ জালিয়াতি: এবি ব্যাংকের ১৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ
বাদীর আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসী আখলাক মিয়া ২০০৮ সালে সিটি ব্যাংকে ৭০ লাখ টাকা দিয়ে এফডিআর করেন। তৎকালীন ব্যাংক ম্যানেজার আখলাক মিয়াকে বলেছিলেন, আমরা তিন দিন পর মূল কাগজ হস্তান্তর করব। পরবর্তীতে তিনি লন্ডন চলে যান। সেখান থেকে ব্যাংকে যোগাযোগ করার পর ম্যানেজার বলেন, আমরা কাগজগুলো যত্মে রেখেছি, আপনাকে ফটোকপি পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর ম্যানেজারের কথায় তিনি বিশ্বাস স্থাপন করেন। এরপর তিনি আবার দেশে আসেন। তখন ম্যানেজার মুজিবুর রহমান পুনরায় বললেন, ব্যাংকে রাখা ২২ লাখ টাকাও এফডিআর করতে। তিনি সরল বিশ্বাসে এফডিআর করেন। তিনি এফডিআর এর কাগজপত্র চাইলে তিনি আবারও পরে দেবেন বলে বাদীকে আশ্বস্ত করেন। বাদী যুক্তরাজ্য চলে যান। সেখান থেকে এফডিআর এর ডকুমেন্ট হিসাব চেয়ে ব্যাংকে চিঠি দেন।
এ ঘটনায় প্রাক্তন ব্যবস্থাপক বরখাস্ত হয়ে যান। পরবর্তীতে আসা সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এই গ্রাহককে বলেন, আপনার অ্যাকাউন্টে সমস্যা হয়েছে। আগের ম্যানেজার বরখাস্ত হয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এ কথা শুনার পর বাদী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি মানসিকভাবে খুবই বিপর্যস্ত হন। মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিনি বিভিন্ন চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হন।
বাদীর পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট বিপ্রদাস ভট্টাচার্য জানান, ‘পরবর্তীতে তিনি টাকা উদ্ধারে সিটি ব্যাংকের এমডি, ব্যাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেন। কিন্তু, সিটি ব্যাংক উল্টো বাদীকে হয়রানি করতে তার উপর ফৌজদারী আইনে সিআর মামলা করে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, যদি গ্রাহক তথা বাদীকে জেলে ঢোকানো যায়, তবে তিনি বিষয়টি আপসে নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হবেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে আবারও হয়রানি করা হয়। ওই মামলা থেকে তিনি নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়ার পরও খালাস আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলার শুনানি করানো হয়। এরপর মহানগর আদালতের খালাস আদেশ উচ্চ আদালত বহাল রাখে। তারপরও সিটি ব্যাংক ক্ষান্ত হয়নি। মামলাটি হাইকোর্টের আপিল বিভাগে নেয়া হয়। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে। এটা ইতিহাসের একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা গ্রাহকের টাকা ব্যাংক মেরে গ্রাহককে জেলে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য মামলা করা হয়। এ ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়।’
আরও পড়ুন: ৫ ব্যাংকারের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
বাদীর অপর আইনজীবী জয়শ্রী দাস জয়া জানান, এ ঘটনার প্রতিকার পেতে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আইনজীবীরা আরও জানান, প্রথম এফডিআর ছিল ৭০ লাখ টাকা। ১২ দশমিক ৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু,লভ্যাংশ মেলেনি। বরং সমূহ টাকা সিটি ব্যাংক আত্মসাত করে এবং বাদীকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হয়। তাই ক্ষতিপূরণসহ এই মামলা দায়ের করেন। তার মধ্যে ২০০৮ সালের ঘটনা চিঠি আদান-প্রদান করতে গিয়ে দেরি হয়। তারা বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা করলে আমরা মামলায় যেতাম না। ১২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মধ্যে ১০ কোটি টাকা মানহানির, বাকি টাকা চিকিৎসা, বিমান ভাড়াসহ ১২ কোটি ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।’
মামলার বাদী সৈয়দ আখলাক মিয়া বলেন, ‘আমি দেশে আসার পর ব্যাংকে টাকা চেয়ে চিঠি দেই। টাকা চাইতে গেলেই ব্যাংক ম্যানেজার বলেন, টাকা ইনক্যাশ হয়ে গেছে। তখন আমাকে বলা হয়, ছয় জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। ঘটনাটি শুনে আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। উপরন্তু তারা আমাকে অপেক্ষায় রেখে পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। মাল ক্রোকের অর্ডার করে। ২০১৭ সালে ব্যাংকের মামলা থেকেও তিনি খালাস পান। ওই মামলা তারা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। সেখান থেকেও তিনি খালাস পান।’