দুদকের এক তদন্ত কর্মকর্তার ভুলে নিরাপরাধ এক ব্যক্তির দণ্ড নিয়ে করা রিট মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার এমন মন্তব্য করে হাইকোর্ট।
আদালতে রিট আবেদনকারী যুবকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
১৯৯৮ সালের এসএসসির সনদ জালিয়াতি করে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছেন এক যুবক-এমন অভিযোগ এনে ২০০৩ সালে মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো।
আরও পড়ুন: দুদকের ভুল তদন্তে সাজা বাতিল করেছে হাইকোর্ট, তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ
১০ বছর পরে অভিযোগপত্র দাখিল এবং ২০১৪ সালে মামলার বিচার শেষে আসামিকে পলাতক দেখিয়ে তিনটি ধারায় পাঁচ বছর করে ১৫ বছরের সাজা দেন নোয়াখালীর বিশেষ জজ আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।
এ দণ্ডে গ্রেপ্তারে পুলিশি তৎপরতা দেখে নিরাপরাধ যুবক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটে তিনি উল্লেখ করেন, তার জন্ম ১৯৯০ সালে। এমনকি তিনি সংশ্লিষ্ট কলেজে কোনো দিন ভর্তি হননি। এরপর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের জবাবে দুদক বলছে-সরল বিশ্বাসের ভুল (বোনাফাইড মিসটেক)।
রুলের শুনানিতে খুরশীদ আলম খান বলেন, এই তদন্ত কর্মকর্তার জীবনের এটা প্রথম চার্জশিট।
তখন আদালত বলে, প্রথমটাই তো তার ভালো মতো করা উচিত ছিল।
আদালত বলে, দুয়েকটা ভুলের কারণে আপনার গোটা প্রতিষ্ঠান (দুদক) প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। কিছু কিছু লোক আছে, জায়গা আছে যেখানে মানুষের প্রত্যাশা হলো তাদের ফেরেশতার মতো থাকতে হবে।
এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী বলেন, আমরা চাই আবার ট্রায়াল (বিচার) হোক। সত্যিকার মানুষ (আসামি) আসুক। উই আর এক্সট্রিমলি, এক্সট্রিমলি সরি। এটাতে পুরো কমিশন দুঃখিত, লজ্জিত। আমরা দুদক আইনের ৩১ (সরল বিশ্বাসের ভুল) এর কথা বলে সব মামলায় পার পেতে চাচ্ছি না।
আরও পড়ুন: অর্থপাচার তদারকিতে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের তালিকা চায় হাইকোর্ট
জন্ম নিবন্ধনে ফিঙ্গার প্রিন্ট কেন বাধ্যতামূলক নয়: হাইকোর্ট
আদালত বলে, কমিশন অনেক ভালো কাজ করছে। কিন্তু দুয়েকটা ঘটনায় এমন একটা নেতিবাচক সংবাদ সারা দেশে তৈরি হয়, তখন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
খুরশীদ আলম খান বলেন, আমরা জাহালমের মামলা কনটেস্ট করেছি। কিন্তু এখানে কনটেস্ট করছি না। মেনে নিয়েছি।
এক পর্যায়ে আদালত বলে, যদি কমিশনের কমিশনাররাসহ সব জনশক্তি তাদের হিসাব বিবরণী প্রকাশ করে, তাহলে মানুষের কাছে কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেশি বাড়বে।
খুরশীদ আলম বলেন, আদালতের এ বার্তা পাঠিয়ে দেব।
এরপর আদালত রায় দেয়। রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুল তদন্তের ওপর নিরাপরাধ যুবককে তিনটি ধারায় দেয়া ১৫ বছরের কারাদণ্ডের রায় বাতিল করে হাইকোর্ট। একই সাথে এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়ে নতুন করে ওই মামলা তদন্ত করতে বলেছে উচ্চ আদালত। এছাড়া সাজা পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হয়েছে।