২০৩০ সালের মধ্যে সকল নদীর পলি অপসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, নদী দখল রোধ ও পলি অপসারণের মাধ্যমে নাব্যতা রক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সরকার বসে নেই। এ ব্যাপারে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। খনন করে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সকল নদীর পলি অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) মাধ্যমে ৮০টি ড্রেজার কেনা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের নদীর নাব্যতা ও পলি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা বলেন। বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
নদী বাঁচাও আন্দোলন, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মহসীনুল করিম লেবুর সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর সিনিয়র অ্যাডভাইজার ড. মমিনুল হক সরকার।
সেমিনারে খালিদ মাহমুদ বলেন, নদীর গতিপ্রবাহ ঠিক রাখতে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে বর্তমান সরকার অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। এসব উদ্যোগ নেয়া অত সহজ নয়। নদীর নাব্যতা ঠিক রাখতে এখন আর নদী শাসন নয়, বরং নদী ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নদীর পলিগুলোরও ব্যবস্থাপনা করে তা কাজে লাগানো হচ্ছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। তবেই নদীর প্রবাহ ফিরে আসবে বলে আমি মনে করি।
আরও পড়ুন: শীতলক্ষ্যা নদী তীরের ৩৪ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান নদী ব্যবস্থাপনায় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। নদী খননের মাধ্যমে নৌপথগুলোকে সচল করে সড়কেরও চাপ কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এসব নদী কৃষকদের জন্য ফসল উৎপাদনেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সেমিনারে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অখিল কুমার বিশ্বাস বিশেষ অতিথি হিসেবে এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ও নদী বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার সাদাত অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন।
এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ড. লুৎফর রহমান ও ড. মহসীন আলী মণ্ডল, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও জীববৈচিত্র বিষয়ক সম্পাদক খন্দকার হাছিবুর রহমান।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, মানুষকে সম্পৃক্ত করে নদীর নাব্যতা রক্ষায় অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নাব্যতা রক্ষা করতে পারলে নৌপরিবহন অনেক সহজ হবে। পরিবহন ব্যয় অনেক কমে যাবে। বর্তমান সরকার নগর দূষণ দূর করে নাব্যতা রক্ষার মাস্টারপ্ল্যান করেছে। যা বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশের নদীগুলো তার আগের অবস্থা ফিরে পাবে।
আরও পড়ুন: দেশের সব নদীর তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অখিল কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা নদীর নাব্যতা রক্ষা ও পলি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন মেয়াদি কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান জনগণও এ বিষয়ে অনেক সচেতন। পানি আইনের আলোকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে বেশ কিছু উদ্যোগ সফল করার জন্য কাজ করছে।
সেমিনারে বক্তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী দখলমুক্ত ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, প্রতি বছর উজানের পানির ঢলে দেশের নদ-নদীগুলোতে প্রায় ২৪০ কোটি মেট্রিক টন পলি জমে। যা দেশের নদ-নদীগুলোর অস্তিত্বকে বিলীন করে ফেলছে। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। একদিকে যেমন নাব্যতা সংকটে নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনি সেচের পানিরও অভাব দেখা দিচ্ছে।
নাব্যতা রক্ষা করে স্বল্পব্যয়ের নদীপথগুলোকে সচল ও সেচের পানির অভাব পূরণে উপযুক্ত সময়ে নদ-নদী খননের মাধ্যমে পলি অপসারণ ছাড়া এসব নদ-নদীকে বাঁচিয়ে রাখা অসম্ভব। নদ-নদীগুলোকে বাঁচাতে খনন ও দখলমুক্ত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: মাগুরায় মধুমতি নদীতে আবার ভাঙন শুরু