দেশে ই-কমার্সের ব্যাপক প্রসার হলেও আইনী কাঠামোর অনুপস্থিতি ও পরিবীক্ষণ না থাকায় এই সেক্টরে জবাবদিহিতা গড়ে উঠেনি। কিছু সংখ্যক মুনাফা লোভী প্রতারক গ্রাহক স্বার্থ ক্ষুন্ন করে টাকা লুট করছে। যে সমস্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ লুট করেছে তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
শনিবার এফডিসিতে ‘ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ’ বিষয়ক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই)সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
আরও পড়ুন: দেশে ই-কমার্স বাজার ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এ কে আজাদ বলেন,প্রতারিত হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নিতে হবে।যেখানে দেশের ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পরিমাণ বাড়ছে সেই টাকা বিনিয়োগে না এনে সাধারণ নাগরিকদের অস্বাভাবিক লোভনীয় অফার দিয়ে তাদের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। দিনশেষে অনলাইন পণ্য কেনার নামে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের সংখ্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। ফলে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। সার্বিকভাবে এই খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষায়িত সেল গঠন জরুরি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন,দেশের কোম্পানি আইন, ট্রেড লাইসেন্স আইন বা আয়কর আইনে ই-কমার্স হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি। বর্তমানে ই-কমার্স ব্যবসা তথ্য প্রযুক্তি সেবা হিসেবে নিবন্ধিত হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলাদেশে, ই-কমার্স খাতে নিয়োজিত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোন ঘোষণা ছাড়াই ব্যবসা বন্ধ করে আত্মগোপন করেছে। সম্প্রতি আলোচিত ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এবং ই-অরেঞ্জের মালিক ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর ই-কমার্সের প্রতারণার চিত্র আরও দৃশ্যমান হয়। ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ ছাড়াও নিরাপদ ডটকম, ধামাকা শপিং ডটকম, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি, কিউকুম নামক আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গা-ঢাকা দেয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরা ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে মায়াজাল ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বাহারি বিজ্ঞাপন, অস্বাভাবিক ও আকর্ষণীয় অফার,অবিশ্বাস্য ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ইত্যাদি প্রলোভনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে, ইভ্যালির দেনা ৪০৩ কোটি টাকা আর সম্পদ রয়েছে ৬৫ কোটি টাকার। গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্যমূল্য বাবদ ২১৪ কোটি টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ না করা এবং পণ্য কেনা বাবদ ১৯০ কোটি টাকা দেয়নি ইভ্যালি। এছাড়াও ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকের এক হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ই-কমার্স বাস্তবায়নে চুক্তি সই
ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরির মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সাতটি সুপারিশ করেছেন।
সুপারিশগুলো হলো - ই-কমার্স খাতের নৈরাজ্য বন্ধে নীতিমালা ও নির্দেশিকার পাশাপাশি আইন প্রণয়ন জরুরি, ই-কমার্স খাতে বিদ্যমান নৈরাজ্য অনুসন্ধান ও আইনী কাঠামো তৈরির জন্য একটি কমিশন গঠন করা,জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনলাইন কেনাকাটায় বিভিন্ন প্রতারণায় অভিযুক্তদের দৃশ্যমান শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রহকের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করা,দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিদ্যমান আইনের আওতায় প্রতারিত গ্রাহকরা কীভাবে আইনী প্রতিকার পেতে পারেন তা জনগণকে অবহিত করা,ইভ্যালি বা ই-অরেঞ্জসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের সঠিক তালিকা ও অর্থের পরিমাণ জানার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটি গঠন করা, প্রতারণার সাথে জড়িত কাউকে ই-ক্যাব বা অন্য কোন ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য না করা এবং ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতারণায় অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসক বসিয়ে তাদের সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে যতটা সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত গ্রহকের অর্থ ফেরত দেয়া।
আরও পড়ুন: ই-কমার্সে বিলিয়ন ডলারের মার্কেট রয়েছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
এ কে আজাদ আরও বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে ঋণ খেলাপির সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি ব্যাংকে ঋণ খেলাপির পরিমাণ ২০-২৫ শতাংশ। প্রতিবছর সরকার ঋণ খেলাপের কারণে ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ঋণখেলাপি এক শতাংশের বেশি নয়।বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও ঋণখেলাপির সংখ্যা বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা না গেলে আর্থিক খাতে বিপর্যয় আসতে পারে।
তিনি বলেন,করোনার অভিঘাতে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান কমেছে। অন্যদিকে সরকারি খাতেও দীর্ঘদিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। ফলে দেশে বেকার তরুণের সংখ্যা বাড়ছে। শিক্ষার গুণগত মান নিম্নমুখী হওয়ার কারণে তরুণরা শ্রমবাজারের চাহিদার আলোকে নিজেকে তৈরি করতে পারছে না। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের করোনার ভ্যাকসিন সনদ পৃথিবীর অনেক দেশ গ্রহণ করছে না।
প্রতিযোগিতায় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি এর বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।