আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী মাহবুব উল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) বিষয়ক সুযোগ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। এছাড়া কেবলমাত্র অবকাঠামোগত পরিবর্তনই নয়, বরং বয়স্ক ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রয়োজন এবং বাধা মোকাবিলা করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকার ডেইলি স্টার সেন্টারে একটি সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
‘দেশব্যাপী প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিরাপদ পানি, পয়নিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) বিষয়ক সমীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) ও আইসিডিডিআরবি।
জনসংখ্যাভিত্তিক সমীক্ষা কার্যক্রমটি ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের আটটি বিভাগের ৩২টি জেলায় পরিচালিত হয়েছে।
এই গবেষণায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে, শহর ও গ্রামের ৬ হাজার ৪৫৭টি পরিবারের মোট ১৭ হাজার ৫৭৭ জন ব্যক্তিকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। সর্বজন গৃহীত ‘ওয়াশিংটন গ্রুপের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলীর’ মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণের কাজটি করা হয়। সেসব প্রশ্নের মধ্যে ছয়টি বিভাগের যেকোনো একটিতে কেউ ‘অনেক অসুবিধা’ বা ‘কিছুই করতে পারে না’ বলে উল্লেখ করলে অথবা ‘প্রতিদিন’ এবং ‘অনেক বেশি’ বিষণ্ণ বা উদ্বিগ্ন থাকলে তাদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতিবন্ধিতার হার ৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৭ শতাংশ এবং নারী ৯ শতাংশ। তবে ৫৯ কিংবা এর চেয়ে কম বয়সীদের প্রতিবন্ধিতার হারের (৫ দশমিক ২ শতাংশ) তুলনায়, ৭০ বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে প্রতিবন্ধিতার হার (৪৭ শতাংশ) উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ওয়াশ বিষয়ক সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান সার্বিকভাবে চিহ্নিত করতে ২ হাজার ৩৭৮ জন প্রতিবন্ধী ও স্বাভাবিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ জরিপ সম্পন্ন করা হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫০ শতাংশ প্রতিবন্ধী পানি সংগ্রহে অসুবিধার (৪৮ শতাংশ) সম্মুখীন হন। ১৪ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রয়োজনের সময় বাড়িতে খাবার পানি নিজে নিয়ে খেতে পারেন না। এর কারণ হিসেবে বেশিরভাগই (৯০ শতাংশেরও অধিক) শারীরিক সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন এবং ১৬ শতাংশ অন্যের উপর নির্ভশীলতার কথা জানান।
জরিপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ (৭৭ শতাংশ) পরিবারে মৌলিক পয়নিষ্কাশন সুবিধা থাকলেও অধিকাংশের প্রবেশপথ এবং অবকাঠামোতে প্রতিবন্ধীবান্ধব বৈশিষ্ট্য যেমন- হুইলচেয়ারবান্ধব প্রবেশ পথ (৯৭ শতাংশ), উচ্চতা-সামঞ্জস্যযোগ্য প্যান/কমোড (৯৭ শতাংশ), পানি ও হাত ধোয়ার সামগ্রীর সহজ প্রাপ্যতার (৭৪ শতাংশ) অভাব রয়েছে।
ফলস্বরূপ, প্রায় ২৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা শৌচাগার ব্যবহার করার সময় মল-মূত্রের সংস্পর্শে আসেন। এ ব্যতীত, বাড়ি থেকে ওয়াশ ফ্যাসিলিটির দীর্ঘ দূরত্বের কারণে বেশিরভাগ গ্রামে বা শহুরে বস্তিগুলোতে, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হয়।
আরও পড়ুন:টেকসই ওয়াশ সেবাদানে ওয়াটারএইডের ভূমিকা প্রশংসনীয়: সুইডেনের রাষ্ট্রদূত
এছাড়াও, বিশেষত যাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা (উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা) বা কমিউনিকেশন সীমাবদ্ধতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে, ওয়াশ সুবিধাসমূহ ব্যবহার করার সময় বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হওয়ার ভয়, মৌখিক বা শারীরিক নির্যাতনের ভয়, আক্রমণাত্মক প্রাণীদের ভয় এবং রাতে নিরাপত্তাহীনতা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে।
এই গবেষণার ফলাফল অনুসারে, ১২ শতাংশ প্রতিবন্ধী নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবকালীন পণ্য পরিবর্তন এবং ব্যবহার পরবর্তী ব্যবস্থাপনার জন্য অন্য কারো সহায়তার প্রয়োজন হয় এবং এই সহায়তার অপ্রতুলতা প্রতিবন্ধী নারীদের মধ্যে ইনকন্টিনেন্স সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষত যাদের যোগাযোগের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য, এই ইনকন্টিনেন্স সমস্যাটি একটি গুরুতর এবং জরুরি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।
এই সমীক্ষা মূলত বাংলাদেশ, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং জাম্বিয়াতে বাস্তবায়িত একটি বৈশ্বিক কর্মসূচির অংশ যা লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের (এলএসএইচটিএম) প্রোগ্রাম ফর এভিডেন্স টু ইনফরমেশন ডিসঅ্যাবিলিটি অ্যাকশন (পিইএনডিএ), এফসিডিও এর ও আইসিডিডিআরবির আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বি-স্ক্যান বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের প্রথম ‘ন্যাশনাল ওয়াশ অ্যাকাউন্টস’ প্রতিবেদন প্রকাশ