ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) করা অর্থপাচার মামলায় বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন। সোমবার ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআই নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কনম্যান সুকেশ চন্দ্রশেখরের চাঁদাবাজি ও ২০০ কোটি টাকার অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইডি’র করা মামলায় জ্যাকুলিনকে পাতিয়ালা হাউস কোর্টে তলব করা হয়েছিল।
এ সময় অর্থপাচার মামলায় জামিনের আবেদন করেন অভিনেত্রীর আইনজীবীরা। অতিরিক্ত দায়রা জজ শৈলেন্দর মালিক জামিনের আবেদনে ইডির কাছে প্রতিক্রিয়া চেয়েছেন। ইডির জবাব না পাওয়া পর্যন্ত তার নিয়মিত জামিন আদালতে বিচারাধীন থাকবে।
আরও পড়ুন: ‘বিউটি সার্কাস’ মুক্তি পাবে ২৩ সেপ্টেম্বর
তার আইনজীবীর অনুরোধে আদালত ৫০ হাজার টাকার জামিন বন্ডে জ্যাকুলিনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।
শুনানির পরবর্তী তারিখ এই বছরের ২২ অক্টোবর।
এর আগে বুধবার আদালত এই অভিনেত্রীকে চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেন।
চলতি বছরের ১৭ আগস্ট দিল্লির একটি আদালতে কনম্যান সুকেশ চন্দ্রশেখরের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলায় দাখিল করা একটি সম্পূরক চার্জশিটে বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের নাম অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করে ইডি।
অতিরিক্ত দায়রা বিচারক প্রবীণ সিং সম্পূরক চার্জশিটটি আমলে নেয়ার পরে ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জ্যাকুলিনকে এ হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
আদালত বর্তমান মামলার সমস্ত অভিযুক্তকে চার্জশিটের একটি অনুলিপি সরবরাহ করতে নির্দেশ দিয়েছে ইডিকে।
এদিকে, সোমবার এই মামলার তদন্তকারী দিল্লি পুলিশের অর্থনৈতিক অপরাধ শাখার (ইওডব্লিউ) একজন আইনজীবী হাজির হয়েছিলেন।
তিনি আদালতকে জানিয়েছেন যে জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজকে ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট হাজির হতে বলা হয়েছিল, কিন্তু তিনি হাজির হননি। তাই তারা সমন জারি করেছে।
তিনি আরও বলেন, জ্যাকুলিনের পক্ষে অ্যাডভোকেট প্রশান্ত পাতিল হাজির হয়েছিলেন।
সে সময় প্রশান্ত জানান যে জ্যাকুলিন এই হাজির হবেন এবং তদন্ত সংস্থাকে সহযোগিতা করবেন।
তদন্তের স্বার্থে এই ঘটনায় জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজকেও ইডি একাধিকবার তলব করেছে।
ইডি’র আগের চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ এবং নোরা ফাতেহি এই বিষয়ে রেকর্ড করা বিবৃতির বিস্তারিত উল্লেখ করেছে।
ইডি-র আগের চার্জশিট অনুসারে, বলিউড অভিনেত্রী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ ও নোরা ফাতেহি অভিযুক্ত সুকেশের কাছ থেকে উপহার হিসেবে বিএমডব্লিউ গাড়ি নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: মেরিলিন মনরোর মোহময়তায় দর্শককে ভাসাবে নেটফ্লিক্সের ‘ব্লনডি’!
ইডির চার্জশিটে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘তদন্ত চলাকালীন ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট ও ২০ অক্টোবর জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছিল। সেসময় জ্যাকুলিন বলেছিলেন যে সুকেশের কোছ থেকে তিনি গুচি ও চানেল থেকে তিনটি ডিজাইনার ব্যাগ এবং জিমে পড়ার জন্য গুচির দুটি পোশাক, লুই ভিটন জুতা, দুই জোড়া হীরার কানের দুল, নানা রঙের পাথরের একটি ব্রেসলেট এবং দুটি হার্মিস ব্রেসলেট উপহার পেয়েছেন। তাকে একটি মিনি কুপারও দেয়া হয়েছিল, যা তিনি ফেরত দিয়ে দিয়েছিলেন।’
ইডি’র তথ্যমতে, ‘২০২১ সালের ২০ অক্টোবর সুকেশের সঙ্গে জ্যাকুলিনের দেখা হয়েছিল। এব্যাপারে জ্যাকুলিন বলেছিলেন যে সুকেশ চন্দ্রশেখর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যক্তিগত জেট ভ্রমণ এবং তার হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন।
অন্যদিকে আরেক অভিনেত্রী নোরা ফাতেহির বক্তব্য আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইন (পিএমএলএ)-২০০২ এর ৫০ ধারার অধীনে ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এবং ১৪ অক্টোবর রেকর্ড করা হয়েছিল। যেখানে তিনি বলেছিলেন যে তিনি একটি দাতব্য ইভেন্টের জন্য বুকিং পেয়েছিলেন এবং ইভেন্ট চলাকালীন তাকে একটি গুচি ব্যাগ এবং একটি আইফোন উপহার দিয়েছিলেন লীনা পাওলোস (চন্দ্রশেখরের স্ত্রী)।
নোরা আরও জানিয়েছেন যে লীনা পাওলোস তার স্বামীকে ফোন করেছিলেন এবং ফোনটি স্পিকারে রেখেছিলেন। তখন তিনি (নোরা) তাকে (সুকেশকে) ধন্যবাদ জানান এবং সুকেশ বলেন যে তারা (সুকেশ ও তার স্ত্রী) তার (নোরার) ভক্ত। এসময় তিনি (সুকেশ) আরও বলেছিলেন যে তারা (সুকেশ ও তার স্ত্রী) তাকে ভালবাসা ও উদারতার প্রতীক হিসেবে একটি নতুন বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দেবেন।
ইডি জানায়, তদন্তের সময় সুকেশ চন্দ্রশেখর এবং তার সহযোগীদের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছিল।
তল্লাশির সময়, পিএমএলএ-এর ১৭ ধারার অধীনে ১৬টি হাই-এন্ড গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং এই গাড়িগুলো হয় লীনা পাওলোসের সংস্থার নামে বা তৃতীয় পক্ষের নামে।
আরও পড়ুন: ৩৫ দিন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি: নুসরাত ফারিয়া