শুক্রবার আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এর আগে বেলা ১১টায় আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে তাকে নেয়া হয় এবং সেখান গার্ড অব অনার প্রদান শেষে এ শব্দসৈনিকের মরদেহ নেয়া নেয়া হয় বনানীতে।
আরও পড়ুন: আলী যাকেরের মৃত্যুতে চলচ্চিত্র তারকাদের শোক
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক আলী যাকের ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার মাঝেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
তার ছেলে ইরেশ যাকের ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি লেখেন, ‘চার বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধের পর বাবা আজকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে চলে গেল। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন। উনি যে-ই দোয়া এবং ভালোবাসা পেয়েছেন তার জন্য আমরা হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞ।’
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা আলী যাকেরের দুই দিন আগে করোনা শনাক্ত হয় বলে জানান ইরেশ।
আলী যাকের ছিলেন বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি-র পরিচালক ও চেয়ারম্যান।
চট্টগ্রামে ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করা আলী যাকের ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি অভিনয় শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করেন এবং মঞ্চ, টেলিভিশন ও রুপালি পর্দায় বৈচিত্র্যময় সব চরিত্রে অভিনয় করে পরিণত হন অন্যতম সফল অভিনেতায়।
তিনি ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে নাট্যাভিনেতা হিসেবে গৌরবময় ক্যারিয়ারের সূচনা করেন। তিনি ওই বছরে দলটির সাথে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন। একই বছরে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন এবং শেষ দিন পর্যন্ত এদের সাথে জড়িত ছিলেন।
আলী যাকের তার নাটকের দলের হয়ে ২০১৯ পর্যন্ত ১৫ নাটকে নির্দেশনা এবং ৩১টিতে অভিনয় করেছেন। যার মধ্যে কয়েকটি হলো- কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, গ্যালিলিও, নূরলদীনের সারাজীবন, ম্যাকবেথ, অচলায়তন ও দেওয়ান গাজীর কিস্সা।
নূরলদীন, গ্যালিলিও ও দেওয়ান গাজীর ভূমিকায় আলী যাকেরের অভিনয় সমালোচক ও নাটকপ্রেমীদের কাছ থেকে বয়ে আনে বিশাল প্রশংসা। তিনি আজ রবিবার ও বহুব্রীহি টেলিভিশন ধারাবাহিকে অভিনয় করেও বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন।
বরেণ্য এ নাট্যজন শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। সেই সাথে তিনি তার বর্ণাঢ্য জীবনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক ও নরেন বিশ্বাস পদকসহ নানা সম্মাননা লাভ করেছেন।
আলী যাকের মৃত্যুকালে স্ত্রী সারা যাকের, ছেলে ইরেশ যাকের ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়াসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক আলী যাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী এক শোকবার্তায় বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।