খুলনা, ২৮ জুন (ইউএনবি)- দুর্বিষহ গরমে ভ্রমণ করার সময় বেশিরভাগ শহরের বাসিন্দারা তৃষ্ণা মেটাতে পানি বা আইসক্রিম খেয়ে থাকেন, কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নকল আইসক্রিম উৎপাদন করছেন।
গরমে আইসক্রিমের চাহিদা মেটানোর জন্য অসংখ্য অবৈধ আইসক্রিম কারখানা গড়ে উঠেছে।
বেশিরভাগ কারখানাই লাইসেন্স বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বেশি লাভের আশায় রাসায়নিক ব্যবহার করায় মানব স্বাস্থ্য বিশেষ করে শিশু স্বাস্থ্যে ঝুঁকি বাড়ছে।
সম্প্রতি ইউএনবির প্রতিনিধি বেশ কয়েকটি কারাখানায় ঘুরে জানিয়েছেন, কারাখানাগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আইসক্রিম উৎপাদন করা হচ্ছে। অধিকাংশ কারখানা মাত্র ২০-২৫ ফুটের একটি রুম। রুমের মধ্যে ভেজা এবং স্যাঁতসেঁতে নোংরা পরিবেশ।
তবে সবচেয়ে ভীতিকর বিষয় হলো এসব কারখানায় উৎপাদিত আইসক্রিমে প্রসিদ্ধ কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন- নরসিংদীর কিরণমালা, কিরণমালা কুলফি, কোয়ালিটি আইসক্রিম, ক্যাটবেরি, স্পেশাল চকবার, অরেঞ্জ ইত্যাদি।
এছাড়া আইসক্রিমে ঘন চিনি, স্যাকারিন, খাওয়ার অনুপযোগী (কাপড়ের) রঙ, অ্যারারুট পাউডার, সুইটিক্স পাউডারের মতো অস্বাস্থ্যকর উপাদান চমৎকারভাবে প্যাকেজিং করে গ্রাহকদের কাছে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, ভ্রাম্যমাণ আদালত কিছু অবৈধ ‘বরফ বার’ বন্ধ এবং জরিমানা করেছে, কিন্তু কয়েকদিন পরে তারা আবার কারখানাগুলো চালু করে।
শহরের আজাদ লন্ড্রি চত্বরে তিনটি কারখানা, বাঘমারা সোনামনি স্কুলের কাছে দু’টি, ফুলতলায় দু’টি, গল্লামারি অগ্রণী ব্যাংক কলোনি এলাকায়, টুটপাড়া ফরিদমোল্লার মোড় এলাকায়, নতুন রাস্তায়, দৌলতপুরে এবং লাবনচোরায় একটি করে নকল আইসক্রিম তৈরির কারখানার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে এগুলোর নিজস্ব কোনো সাইনবোর্ড নেই।
নগরীর বাগমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আঁখি আক্তার বলেন, কয়েকদিন খুব গরম পড়ায় আমার মেয়েকে একটি আইসক্রিম কিনে দিয়েছিলাম। বাড়িতে ফিরতে না ফিরতে পেটে সমস্যা শুরু হয়। হাসপাতালে যেতে হয়েছে।
‘আইসক্রিমে ক্ষতিকারক উপাদান রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর আইসক্রিম তৈরির কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে হবে,’ বলেন তিনি।
ডাকবাংলো এলাকার ব্যবসায়ী মো. আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, সরকারের উচিত এ ধরনের আইসক্রিম কোম্পানি বন্ধ করে দেয়া। ভ্রাম্যমাণ আদালতকে শুধুমাত্র জরিমানা করলে হবে না। কারখানাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। তারা ব্যবসা করুক, তবে সরকারের আইন মেনে।
টুটপাড়া ফরিদমোল্লার মোড় এলাকার নিউ ইভা আইসবারের স্বত্বাধিকারী শেখ খোকন বলেন, কয়েকদিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেছিল। শহরে হাতেগোনা দুই-একটি আইসক্রিম কারখানার বিএসটিআই এর অনুমোদন রয়েছে। বাকি সব কারখানা আইনি কাগজপত্র বা লাইসেন্স ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর এবং নোংরা পরিবেশে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করে আইসক্রিম তৈরি করছে, বলেন তিনি।
খুলনা সিভিল সার্জন এএসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নোংরা পরিবেশে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ব্যবহার করে তৈরি আইসক্রিমগুলোতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেশি। এটি শিশুদের হাড়, লিভার, কিডনি ক্ষতি করে।
তিনি জানান, এসব আইসক্রিমে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের ব্লাড ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া শিশুদের মানসিক বিকাশে এ ধরনের রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।
তাছাড়া এটি শিশুদের মানসিক বিকাশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) খুলনার পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ফ্যাক্টরি করতে গেলে অবশ্যই বিএসটিআই থেকে অনুমোদন নিতে হবে। অবৈধ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, আমরা নিয়মিত পরিদর্শনমূলক অভিযান অব্যাহত রেখেছি। খুলনা জেলার অধিকাংশ আইসক্রিম ফ্যাক্টরির বিএসটিআই লাইসেন্স নেই, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই, তারা ক্ষতিকর রঙ, ফ্লেভার, বেনামী প্যাকেট, লেবেল ব্যবহার করে। তাছাড়া মূল্য, মেয়াদ এবং উৎপাদনের তারিখ নেই। বিভিন্ন অভিযানে ফ্যাক্টরিগুলোতে জরিমানা করেছি এবং অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি।’
এ ব্যাপারে খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’