অর্থায়নের উৎসে বৈচিত্র্য আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলার সরকারের প্রচেষ্টার কারণে আগামী দুই অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সহনীয় সীমার মধ্যে থাকবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
তবে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং তারল্য সংকট রোধে ঋণ পরিষেবার বাধ্যবাধকতাগুলোর ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক নথিতে জানানো হয়, ‘বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বাড়লেও অর্থায়নের উৎসে বৈচিত্র্য আনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তুলতে সরকারের প্রচেষ্টার কারণে বিষয়টি সহনীয় সীমার মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
নথিতে উল্লেখ করা হয়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
দেশের বৈদেশিক ঋণে রেয়াতি ও অ-রেয়াতি উভয় ঋণ রয়েছে, যেগুলোর মেয়াদপূর্তিরও বিভিন্ন সময়কাল রয়েছে।
আরও পড়ুন: মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়ায় ক্ষতির মুখে বিপিডিবি
অর্থ মন্ত্রণালয়ের 'মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)' শীর্ষক নথিতে উল্লেখ রয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে সরকার বৈদেশিক ঋণের মূল পরিশোধে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছিল এবং গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল পরিশোধ ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শেষে এটি আরও বেড়ে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে।
বৈদেশিক ঋণ মুদ্রা মিশ্রণ
নথিতে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের বেশিরভাগই মার্কিন ডলারে মূল্যায়িত হয়, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট বৈদেশিক ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য মুদ্রার মধ্যে রয়েছে জাপানি ইয়েন, যা মোট বৈদেশিক ঋণের ২১ শতাংশ এবং ইউরোর ক্ষেত্রে যা প্রায় ১৫ শতাংশ। অবশিষ্ট বৈদেশিক ঋণ অন্যান্য মুদ্রায় যেমন চীনা আরএমবি ও ব্রিটিশ পাউন্ডে মূল্যায়িত হয়।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের মুদ্রা মিশ্রণ সরকারের জন্য একটি মূল বিবেচ্য বিষয়। কারণ বিনিময় হারের ওঠানামা ঋণ পরিশোধের ব্যয়কে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: 'ডলার সংকট' অযুহাতে দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা
আনুষঙ্গিক ও এসওই দায়বদ্ধতা
২০২৩ সালের মার্চ শেষে বাংলাদেশে বকেয়া গ্যারান্টির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২৪ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন টাকা।
চলতি ২০২৩ অর্থবছরে সরকার ঋণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এন্টারপ্রাইজগুলোকে ৩৬০ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন টাকার নতুন সার্বভৌম গ্যারান্টি দিয়েছে।
এই গ্যারান্টি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ বিমান, বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগ, সার উৎপাদনকেন্দ্র এবং টিসিবির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছিল।
মধ্যমেয়াদে (২০২৫-২৬ অর্থবছর) সরকার সার্বভৌম গ্যারান্টির সঙ্গে সম্পর্কিত আর্থিক ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রক্রিয়াটি সহজতর করতে গ্যারান্টির জন্য বিদ্যমান নির্দেশিকাগুলো সংশোধন করার পরিকল্পনা করেছে।
২০২২ সালের জুন শেষে বাংলাদেশে এসওই'র মোট দায়বদ্ধতার পরিমাণ ৪ হাজার ৩১৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন টাকা, যা দেশের জিডিপির ১০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। যা ২০২১ সালের জুনে রেকর্ড করা ৩ হাজার ৭৭৬ দশমিক ০৯ বিলিয়ন টাকার তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি প্রতিনিধিত্ব করে।
উপরন্তু, ২০২২ সালের জুন শেষে এসওইতে সরকারি ঋণের বকেয়া ভারসাম্য ছিল ৪ হাজার ১৮০ দশমিক ২২ বিলিয়ন টাকা, যা ২০২১ সালের জুন শেষে ছিল ৩ হাজার ৫৩৭ দশমিক ২৭ বিলিয়ন টাকা।
আরও পড়ুন: রিজার্ভের পরিসংখ্যানের ভিন্নতা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় বাজারকে অস্থিতিশীল করছে