জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর সৌদি আরবে ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের ঝাপাইপাড়ার মনিরুল ইসলাম। পরে দেশে ফিরে ঘরে বসে না থেকে তরমুজ চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে সৌদি আরবে অবস্থানকালে ইউটিউব দেখে এ ফল চাষের ধারণা নেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা থেকে বীজ সংগ্রহ করে সদর উপজেলার জামতলা এলাকায় তার ১৩ কাঠা জমিতে তরমুজের আবাদ করেন।
মনিরুল ইসলাম জানান, মাচা পদ্ধতিতে চাষ করে অন্যান্য তরমুজের চেয়ে কম সময়ের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। বীজ বপনের ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে পাকা তরমুজ পাওযা যায়। ১৩ কাঠা জমিতে তরমুজ আবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। বাজারে সুস্বাদু এ তরমুজের চাহিদা রয়েছে, দামও ভালো পাওয়া যায়। প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৭ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। এবার ৫০-৬০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। লাভজনক হওয়ায় আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে তরমুজ চাষের আশা আছে তার।
এদিকে মনিরুলের তরমুজ চাষের সফলতা দেখে এলাকার কৃষকরাও এতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
মনিরুলের ভাই সনি বলেন, ‘আমাদের বরেন্দ্র এলাকাতে এ রকম তরমুজ আগে দেখতে পায়নি। যে তরমুজটা হয়েছে এটা খুব সুস্বাদু। ফলন খুব ভালো, এক একটি তরমুজ দুই থেকে আড়াই কেজি ওজন হচ্ছে।’
এলাকার কৃষক উজির বললেন, ‘এ তরমুজ উপরে কালো হলেও কাটলে ভেতরটা টকটকে লাল। অন্যান্য তরমুজের চেয়ে খেতে ভালো, মিষ্টি বেশি। আমার ইচ্ছা আগামীতে ২ বিঘা জমিতে এ তরমুজ চাষ করব।’
আরেক চাষি সুকুমার বললেন, ‘এটি নতুন ধরনের তরমুজ, বাজারে দেখছি চাহিদা বেশ ভালো। আগামী বছর এ তরমুজ চাষ করার ইচ্ছা আছে আমার।’
বেশ সম্ভাবনাময় এ তরমুজের চাষ বাড়াতে কৃষকদের সহযোগিতা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, জেলার বরেন্দ্র এলাকার মাটি ও আবহাওয়া এ তরমুজ চাষের উপযোগী। এ এলাকায় ধানের পরিবর্তে তরমুজ চাষ করে লাভবান হতে পারবেন কৃষকরা।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, ‘এটি একটি চমৎকার উদ্যোগ। এটি চাষি পর্যায় থেকে এসেছে। চাষি নিজেই উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের পরামর্শও নিয়েছেন। এটি করে তিনি সফলতা পেয়েছেন। তার এ সাফল্যে আশপাশের কৃষকদের মাঝেও এ তরমুজ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বরেন্দ্র এলাকায় সেচের সংকট আছে। সেখানে ধান আবাদ করাকে আমরা উৎসাহিত করছি না। সুতরাং এসব জমিকে যদি আমরা শস্য বহুমুখীকরণের আওতায় এনে তরমুজের সম্প্রসারণ করতে পারি, তাহলে আমি আশা করি যে এ জমিগুলোতে কম সেচের মাধ্যমে তরমুজ ফলিয়ে কৃষকের কাঙ্ক্ষিত লাভ অর্জন করা সম্ভব হবে।’