গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৯০টি ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা। তবে মে থেকে নভেম্বরের মধ্যে খুলনাঞ্চলের চিংড়ি রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে জাপানে।
জাপান ছাড়াও আরও ১৪টি দেশে কম-বেশি চিংড়ি রপ্তানি করছে বৃহত্তর খুলনার ৫৮টি হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
বিগত অর্থবছরে চিংড়ি রপ্তানি বেড়েছে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত মার্চ-এপ্রিলে খুলনাঞ্চলের চিংড়ির বাজার বড় ধাক্কা খায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় চাষী, ফড়িয়া, আড়ৎদার ও রপ্তানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। প্রতি কেজি বাগদা চিংড়ি ৭০০ টাকার পরিবর্তে খুলনাঞ্চলের চাষীরা বিক্রি করেন ৩০০ টাকা দরে। যার ফলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের।
এছাড়া মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে তলিয়ে যায় শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রা এলাকার চিংড়ির ঘের।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সূত্র মতে, আম্পানের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৪৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা মূল্যের চিংড়ি এবং তলিয়ে যায় ৪৬৩৫টি চিংড়ির ঘের।
চিংড়ি চাষে বিপর্যয় কাটছেই না, অব্যাহত ক্ষতির মুখে চাষিরা
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা যায়, খুলনা অঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর হয়ে মে মাসে ১ কোটি ৪ লাখ ডলার, জুন মাসে ১ কোটি ৭২ লাখ ডলার, জুলাই মাসে ৯৩ লাখ ৩ হাজার ডলার, ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৭ ইউরো, আগস্ট মাসে ৭০ লাখ ৭৫ হাজার ডলার, ৫ লাখ ২৫ হাজার ইউরো, সেপ্টেম্বর মাসে ২৩ লাখ ১৭ হাজার ডলার, ৪ লাখ ৩ হাজার ইউরো, অক্টোবর মাসে ৩০ লাখ ৪৮ হাজার ডলার, ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৪৯ ইউরো, নভেম্বর মাসে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ডলার ও ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৪ ইউরো মূল্যের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করা হয়।
যেসব দেশে চিংড়ি রপ্তানি হয় তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জাপান। বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানিকারক অন্যান্য দেশগুলো হলো- বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রাশিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, রোমানিয়া, ইটালি, গ্রীস, সাইপ্রাস, সুইজারল্যান্ড ও চীন।
সাতক্ষীরায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ৫০ গ্রাম প্লাবিত, ভেসে গেছে চিংড়ি ঘের, জমির ফসল
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, চিংড়ি দামি ও সৌখিন খাদ্যপণ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে মন্দা ও অবরুদ্ধকর পরিস্থিতির জন্য চিংড়ির চাহিদা কমে গেছে। ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা গত ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ২৯০টি ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন। যার ফলে ৪৬০ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট মার্টিনস’র কমিশন ম্যানেজার প্রবীর চক্রবর্তী জানান, ইউরোপে খুলনাঞ্চলের হিমায়িত চিংড়ির রপ্তানি কমেছে। তবে জাপানে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে।
বাগেরহাটে ভাইরাসের কারণে চিংড়ি শিল্পে বিপর্যয়
তিনি আরও জানান, এর আগে প্রতি মাসে খুলনাঞ্চল থেকে ২০ কন্টেইনার চিংড়ি রপ্তানি হলেও এখন রপ্তানি হচ্ছে মাত্র পাঁচ কন্টেইনার। প্রতিটি ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য কন্টেইনারের ধারণ ক্ষমতা ১৬ হাজার কেজি এবং ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কন্টেইনারের ধারণ ক্ষমতা ৯ হাজার কেজি।
বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক তার এক প্রবন্ধে খুলনাঞ্চলের চিংড়ি চাষ সম্পর্কে উল্লেখ করে লিখেন, ‘ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের বিলখুকশিয়া অঞ্চলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে হেক্টর প্রতি ৩৩৪ কেজির পরিবর্তে বছরে উৎপাদন হচ্ছে দুই হাজার কেজি। উন্নত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষের জন্য বিপিসি ও বিএসএফএফ ডুমুরিয়ার বান্দায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে কয়েকটি চিংড়ি চাষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।’
তবে অপর একটি সূত্রের দাবি, হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারকরা সরকারি প্রণোদনা পেয়েছেন।
ওজন বাড়ানো ও সতেজ রাখতে চিংড়ি মাছে ক্ষতিকর জেলি!
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন জানান, বর্তমানে বাজারে ২০ গ্রেডের চিংড়ি প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় নেমে এসেছে, যা আগে ৭০০ টাকা থেকে ৭৩০ টাকার মধ্যে ছিল। এসব চিংড়ি উৎপাদনে ৫০০ টাকার মতো খরচ হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন জেলার প্রায় ৬৯ হাজার চিংড়ি চাষী।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন কঠিনতম এ বছরের অর্থনীতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজগুলো বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। যদিও বেশিরভাগ সুবিধা পেয়েছেন বড় শিল্প মালিকরা। তুবও সেটি বেশ স্বস্তিদায়ক ছিল।’