গোপালগঞ্জ-খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা-পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের (এসআরডিআই) আওতায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রে রবি মৌসুমে ডিবলিং পদ্ধতিতে সূর্যমুখী চাষের গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। এখানে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমন ধান কর্তনের পর ভিজা মাটিতে সূর্যমুখীর বীজ ডিবলিং পদ্ধতিতে বপণ করা হয়েছে। এরপর চারা গাছের গোড়া বেঁধে সার প্রয়োগ করা হয়েছে। গবেষণায় তিনটি জাত ব্যবহার করা হয়েছে। স্থানীয়, বারি সূর্যমুখী-২ এবং হাইসান-৩৩ এই তিনটি জাতের সবকটিতেই ফলি এসেছে। এগুলোর মধ্যে হাইসান-৩৩ জাতের ফলন ভালো হয়েছে।
মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে এ জাতের সূর্যমুখী বীজ কাটা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন গবেষণা কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষে সাফল্য
লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার মতে, সূর্যমুখী একটি লবণ সহিষ্ণু ফসল। ফলে লবণাক্ত এলাকায় সূর্যমুখী চাষের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে আমন ধান কাটার পর বিস্তীর্ণ জমি পড়ে থাকে। মাটি ও পানিতে লবণ থাকায় সহজে অন্য কোনো ফসল ফলানো কঠিন। সেখানে বিনা চাষে ডিব্লিং পদ্ধতিতে দুটি সেচ দিয়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করলে পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে। এটি একটি উৎকৃষ্ট তেল ফসল হওয়ায় মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী সূর্যমুখী তেলের চাহিদা পূরণ হবে। এই প্রযুক্তি সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়ে কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উৎসাহী করা প্রয়োজন।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জেলায় মোট ১৯ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে ৩৮ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে জেলায় মোট ৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে ৯ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে জেলায় ১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী করে ২ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়। এরপর ২০১৯-২০২০ (রবি) অর্থবছরে জেলায় মোট ১৪ হেক্টর জমিতে খরিপ-১ জাতের সূর্যমুখী চাষ করে ৩২ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়।
এ বছর ১৪ হেক্টরের বেশি জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে বলে তারা জানান।
বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষক রুহীদাশ বলেন, ‘এ বছর ৩৩ শতক পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আগামিতেও সূর্যমুখী চাষ করব।’
বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, সূর্যমুখী লবণ সহিষ্ণু ফসল। এর বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনোলিক এসিড রয়েছে। এছাড়া এই তেলে ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড না থাকায় তা হার্টের রোগীদের জন্য উপকারী। আমন মৌসুমে ধান লাগানোর পর উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ জমি পতিত থাকে। এ ফসল চাষে অনাবাদী জমির পরিমাণ কমার পাশাপাশি স্থানীয় সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও পূরণ করবে। স্বল্প খরচে এ ফসল চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।’