প্রতি বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ পরিবেশকরা (ডিলাররা) সরকারের ভূর্তূকি মূল্যের ধানবীজ সংগ্রহ করে কৃষকের মাঝে বিতরণ করেন। কিন্তু এ বছর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিএডিসি’র বীজ পরিবেশকদের উফসি জাতীয় ধান বীজ বিক্রয় করতে দেখা যায়নি।
এলাকার নিচু জমিতে বিএডিসি’র উফসী জাতীয় ধানের আবাদ করে থাকেন কৃষকরা। কিন্তু উপজেলা সদরসহ তিনটি ইউনিয়ন এলাকায় কোনো বীজ পরিবেশকরা উফসী ধানের বীজ না পাওয়ায় বীজ সংকটে পড়েছে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সারা উপজেলার আবাদযোগ্য অর্ধেক জমিতে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতীয় ধানের আবাদ হয়ে থাকে। অবশিষ্ট অর্ধেক জমিতে উফসী জাতীয় ধানের আবাদ হয়। সেই হিসেবে এ উপজেলায় প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন উফসী জাতীয় ধান বীজের চাহিদা রয়েছে।
উপজেলার ২নং হবিবপুর ইউনিয়নের আনন্দপুর বাজরের মেসার্স শ্রীপালী ভান্ডার, উপজেলা সদরের মেসার্স স্বপন কুমার পাল, মেসার্স উত্তম ট্রেডার্স ও ১নং আটগাঁও ইউনিয়নের মামুদনগর বাজারের মেসার্স কাজী এন্টারপ্রাইজ নামের ৪ ডিলার এ বছর বিএডিসি কর্তৃপক্ষ কাছ থেকে কোনো ধান বীজ বরাদ্দ দেয়নি। শুধু তাই নয় তাদের লাইসেন্সও বাতিল করে দেয়া হয়েছে বলে দাবি ওই চার প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের।
তবে, ডিলারদের এ দাবি বরাবর অস্বীকার করে আসছেন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ।
মেসার্স কাজী এন্টারপ্রাইজের পরিচালক (বর্তমান) কাজী বদরুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরের জুলাই মাসে আমাদের বীজ ডিলারশিপ নবায়ন করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে লাইসেন্স নবায়ন করতে সরকার নির্ধরিত ফি জমা দিয়ে সিলেট বিএডিসি অফিসে গেলে সেখানকার উপপরিচালক সুপ্রিয় পাল আমাদের লাইসেন্স নবায়ন করেননি।’
কেন লাইসেন্স নবায়ন করেনি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের জানা ছিল না, প্রতি বছর দুই লাখ টাকার বীজ উত্তোলন করতে হয়। বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ইতিপূর্বে কোনো নোটিশ বা চিঠিও দেয়নি। তিনি (সুপ্রিয় পাল) এ অজুহাতে আমাদের লাইসেন্স বাতিল করে দেয়। অন্যদিকে তাদের সাথে যোগাযোগকারী ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে শুধুমাত্র দুটি লাইসেন্স নবায়ন করে বীজ দিচ্ছেন। আমরা স্থানীয় এমপি মহোদয়কে দিয়ে সুপারিশ করেও সুফল পাইনি।’
বিএডিসির অপর তিন বীজ ডিলারদের সাথে কথা হলে তারাও একই কথা জানান।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা প্রান্তিক কৃষকরা প্রতিদিনই উপজেলা সদরের ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারে এসে বিএডিসি’র উফসী জাতীয় ধান বীজের খোঁজ করছেন।
ওইসব কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, তাদের জমির প্রায় অর্ধেক হলো নিচু জমি। ওইসব জমিতে হাইব্রিড ধান চাষ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া চড়া দামে প্রাইভেট কোম্পানির ধানবীজ কেনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ বছর বীজের অভাবে তাদের জমি অনাবাদি থেকে যেতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মবীনুজ্জামান চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বিএডিসির বীজ ডিলারদের লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে শনিবার উপজেলা বীজ কমিটির মিটিং আছে। ওই মিটিংয়ে আশা করি কৃষকদের বীজ পাওয়ার একটি ব্যবস্থা হবে। তাছাড়া প্রত্যেক কৃষককে বীজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।’
মুঠোফোনে এ ব্যাপারে উপজেলা বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-মুক্তাদির হোসেনের কথা হলে তিনি বলেন, আজ শনিবার সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে একটি মিটিং রয়েছে। উক্ত মিটিংয়ে একটা সমাধন হবে। আশা করি উপজেলার সব কৃষক বিএডিসির বীজ পাবেন।’
সিলেট বিএডিসির উপপরিচালক সুপ্রিয় পালের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘উক্ত বীজ ডিলাররা গত বছর তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় তাদের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে।’
‘ইতোমধ্যে উপজেলা বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে শাল্লা থেকে যে দু’জন ডিলার বীজ বরাদ্দ পেয়েছেন, তাদের বীজই সমগ্র উপজেলায় বিতরণ করতে আমি পরামর্শ দিয়েছি’, যোগ করেন তিনি।