বাংলাদেশ পুলিশের শীর্ষ হাসপাতাল হলো কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল (সিপিএইচ)। যে হাসপাতাল থেকে পুলিশ সদস্যরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা আধুনিক চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ পেয়ে থাকেন।
১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ৭০ শয্যার এ হাসপাতালটি ১৯৯৭-২০০৫ সালে ‘বাংলাদেশ পুলিশ হাসপাতালের আধুনিকীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।
সিপিএইচ-এর উপ-পরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক, এসপি, ইউএনবিকে বলেন, হাসপাতালটিতে সুরক্ষার আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন রক্ষা করে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা দিচ্ছে। শুরু থেকেই হাসপাতালটির চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য উচ্চমানের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক আন্তর্জাতিক মানের পিপিই সরবরাহের কারণে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় নির্ধারিত অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণের হার অনেক কম রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. এমদাদুল হক বলেন, সিপিএইচে বর্তমানে ১১০০-এরও বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
রোগীদের মধ্যে ৩৫০ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অন্যরা অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টার যেমন ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুল (ডিটিএস), ট্র্যাফিক ব্যারাক, সিদ্বেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হোটেল ভিক্টোরি এবং হোটেল ক্যাপিটালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৬৬ জন চিকিৎসক, ৭০ জন নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি অন্যান্য হাসপাতাল থেকে আসা আরও ১৫০ জন চিকিৎসক সিপিএইচ এবং অন্যান্য আইসোলেশন কেন্দ্রের কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বিসিএস পুলিশ ক্যাডার ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা ডা. এমদাদ বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চিকিৎসকরা ৮-১০ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন।
একজন চিকিৎসক দৈনিক ৮-১০ ঘণ্টা করে টানা দশ দিন পর্যন্ত কাজ করবেন এবং দায়িত্ব শেষ করে তিনি হোটেলে বিশ্রাম নেবেন। তারপরে পর্যায়ক্রমে দশ দিনের দায়িত্ব শেষ করে তিনি ২০ দিনের বিশ্রামের জন্য বাড়িতে থাকবেন, জানান ডা. এমদাদ।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য তাদের আরও অনেক বেশি ডাক্তার এবং নার্স প্রয়োজন এবং আশা করেন সরকারের ইতোমধ্যে নতুন করে ২০০০ এরও বেশি নতুন চিকিৎসক এবং পাঁচ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়ার ফলে সিপিএইচ আরও বেশি চিকিৎসক ও নার্স পাবে।
ডা. এমদাদ বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য এরইমধ্যে রাজধানীর ইমপালস হাসপাতাল ভাড়া করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।
তিনি বলেন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালটি কেবল করোনাভাইরাস আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দিবে। ‘আমরা ইতোমধ্যে শনিবার আমাদের আইসোলেশন সেন্টার থেকে ১০০ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে ইমপালস হাসপাতালে স্থানান্তর করেছি এবং আরও রোগীদের পর্যায়ক্রমে সেখানে স্থানান্তর করা হবে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রবিবার সুস্থ হয়ে উঠায় ৭০-৮০ পুলিশ সদস্যকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদরদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের শারীরিক পরিস্থিতি দেখাশোনা করার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের নির্দেশে বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে।
চলমান করোনার মোকাবিলায় মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জীবনের ঝুঁকির নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। সাত দেশপ্রেমিক পুলিশ সদস্য ইতোমধ্যে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, বলেন মো. সোহেল রানা।
মহামারির সময়ে দায়িত্ব পালন করেতে গিয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত মোট এক হাজার ৮৭৮ জন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশেরই (ডিএমপি) আছেন ৮৬৫ জন।
এছাড়াও করোনাভাইরাস সংক্রমণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাত সদস্য মারা গেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।