বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমপিআইএ) সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশে তৈরি সিম্ফোনির মূল কোম্পানি এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ জাকারিয়া ইউএনবির সাথে আলাপকালে এই আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস আরও দীর্ঘসময় থাকলে বাংলাদেশে তৈরি মোবাইল ফোন উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশ কম হবে। এতে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
জাকারিয়া বলেন, আমাদের দেশের বিভিন্ন মোবাইল হ্যান্ডসেটের বেশিরভাগ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক মোবাইল হ্যান্ডসেটের কেন্দ্রবিন্দু চীনে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশেও যার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন বহির্বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় পণ্য সরবরাহ, কেনা-বেচা বন্ধ রয়েছে। অনেক মোবাইলের কাঁচামালের কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। এই ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করায় মোবাইল শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এই সমস্যা দীর্ঘায়িত হলে কাঁচামাল সংকটে উৎপাদন বন্ধ রাখার উপক্রম হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দেশে ৯টি কারখানায় স্যামসাং, সিম্ফনি, ওয়ালটন, অপ্পো, ভিভো, রিয়েলমি, ভাইবস্টার, কিংস্টারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেট তৈরি হয়। এসব কারখানায় প্রায় ১৭-১৮ লাখ হ্যান্ডসেট উৎপাদন হয়।
জাকারিয়া আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি ৫০ শতাংশ কমেছে। আমাদের কোম্পানির জন্য আগে থেকে বেশ কিছু কাঁচামাল নিয়ে রেখেছিলাম বলে এখনও তাতে কাজ চলছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তবে বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে সংকট তৈরি হবে। মোবাইল ফোন উৎপাদন শিগগিরই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে যেতে পারে।
এদিকে দেশীয় তৈরি ট্রানশন হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক ইউএনবিকে বলেন, দেশের বাজারে বর্তমানে যা হ্যান্ডসেট আছে তার ৬০ শতাংশ দেশেই তৈরি হচ্ছে, যেগুলো ৯টি মোবাইল ফোন কারখানায় উৎপাদন করা হচ্ছে। চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি অনেকাংশে হ্রাস পাওয়ায় করোনাভাইরাস বাংলাদেশের মোবাইল হ্যান্ডসেটের বাজারকে প্রভাবিত করেছে।
তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাসের কারণে হ্যান্ডসেটের বাজারে বড় প্রভাব পড়বে। করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে কাঁচামাল সরবরাহ অনেকটা কমে গেছে। এবং যা কাঁচামাল আসছে সেটির দামও আগের চেয়ে বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, চীন থেকে সরবরাহ কম থাকায় আমরা নতুন নতুন উৎপাদন উন্মোচিত করতে পারছি না। আমাদের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, সেই সাথে উৎপাদনের গতিও কমে গেছে। এই ভাইরাস আরও দীর্ঘায়িত হলে হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং বাজারে বড় প্রভাব পড়বে।
বিএমপিআইএ’র তথ্য অনুযায়ী, দেশে সব মিলিয়ে ৯টি মোবাইল ফোন কারখানা আছে। এর মধ্যে বড় ৫টি ব্র্যান্ড আছে যারা এখন আর কোনো স্মার্টফোন আমদানি করে না। দুটি দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটন ও সিম্ফোনির পাশাপাশি চীনের তিনটি কোম্পানি ট্রানশন হোল্ডিংস, ভিভো ও অপ্পোও আর কোনো স্মার্টফোন আমদানি করে না। তারা যন্ত্রাংশ এনে স্থানীয়ভাবে সংযোজন করে দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে।
স্যামসাং উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফেয়ার ইলেক্ট্রনিক্সের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, দেশে স্যামসাং আমরা তৈরি করি, তবে তার বেশিরভাগ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করতে হয়। করোনা ভাইরাস দীর্ঘায়িত হলে মোবাইল উৎপাদনে সমস্যা হবে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার হ্যান্ডসেট আমরা উৎপাদন করতে পারছি। কিন্তু কাঁচামাল সংকট হলে ৩০/৪০ হাজার উৎপাদন করতে পারবো।’
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট প্রাণঘাতী ‘কোভিড-১৯’ রোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩৬ জনে।
ওয়ার্ল্ডওমিটার্সের তথ্যানুসারে, সারা বিশ্বে শনিবার পর্যন্ত এ রোগে বিশ্বব্যাপী ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭২ হাজার ৫৩১ জন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া ৬৭ হাজার ৮৪৩ জন বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪৫টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।