ইতোমধ্যে পানির ওপরের ২০টিরও বেশি লাইনের অন্তত ৭০টি করে ব্লক নদীগর্ভে চলে গেছে। এ পর্যন্ত পানির ওপরে দৃশ্যমান দেড় হাজার ব্লক ধসে গেছে। একই সাথে পানির নিচে আরও ব্লক ধসে ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই নতুন নতুন ব্লক ধসে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা বাঁধে ধস নামায় স্বপ্নের সেতু এবং তীরবর্তী হরিপুর জনপদ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দ্রুতই ধস নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
তারা আরও জানান, ধসে যাওয়া ব্লকের নিচে কোনো জিও ব্যাগ নেই। শুধু বালুর ওপর একটি সিনথেটিক অ্যাপ্রন দিয়ে ব্লক বসানো হয়। এ কারণে মাত্র তিন বছরের মধ্যেই এই বাঁধ ধসে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
জানা যায়, সম্প্রতি সেতুর ১০০ মিটার ভাটিতে হরিপুর প্রান্তে প্রতিরক্ষা বাঁধে প্রথমে ফাটল দেখা দেয়। এরপর একে একে সিমেন্টের ব্লক খুলে নদীতে চলে যেতে থাকে। একই সাথে ধস সেতুর কাছাকাছি আসতে থাকে। সেতুর প্রায় ৮০ মিটারের মধ্যেই বাঁধ থেকে নদীতে নেমে গোসল করার সিঁড়ির পুরোটাই ধসে গেছে।
সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া শহর লাগোয়া গড়াই নদীর ওপর শেখ রাসেল কুষ্টিয়া-হরিপুর সংযোগ সেতু নির্মাণের জন্য ২০১৭ সালে এই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৗশল অধিদপ্তর- এলজিইডি।
এ বিষয়ে এলজিইডির কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘পানি উনয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশলীদের মতামত এবং এলজিইডির নিজস্ব প্রতিবেদন যুক্ত করে প্রধান প্রকৌশলী বরাবর বিশেষজ্ঞ দল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো জবাব না আসায় সংস্কার কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।’
তিন বছরের মধ্যেই প্রতিরক্ষা বাঁধ কীভাবে ধসে গেল এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী জাহিদুর আরও বলেন, ‘ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসলে এর কারণ জানা যাবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে যে ধস যেখানে হয়েছে ওই জায়গা বরাবর নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি ড্রেজার গত তিন দিন দাঁড়ানো ছিল। সে সময় স্থানীয়রা ওই স্থানে বুদবুদ দেখতে পান। তারপরই ধস শুরু হয়েছে। স্কাউরিং হয়ে নিচ থেকে বালু সরে গিয়ে এই জায়গায় ধস শুরু হয়। অন্য কোনো জায়গায় এমনটি হয়নি।’
প্রতিরক্ষা বাঁধের ডিজাইনে নদীর বেডে নদীর দিকে দুই মিটার এবং বাঁধের দিকে দেড় মিটার করে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও, ধসে যাওয়া ব্লকের নিচে কোনো জিও ব্যাগ দেখা যায়নি কেন জানতে চাইলে জাহিদুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘স্কাউরিংয়ে বালুর বস্তা নদীতে সরে যেতে পারে।’
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড ও এলজিইডি উভয়কেই নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। সেতুটি যাতে কোনো প্রকার ক্ষতির মুখে না পড়ে সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার অ্যাসোসিয়েট এ সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬০৪ মিটার , প্রস্থ ৬ দশমিক ১ মিটার। ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি ২০১৭ সালে উদ্বোধন করা হয়।