নগরীর বংশালের দোকানদার শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এখন বেশি ক্রেতা নেই। আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করছি কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকায়, আলু ২০ টাকায়, টমেটো ৩০ টাকায়, বেগুন ৩০-৪০ টাকায় এবং লাউ এক একটি ৪০ টাকায়।’
মানুষ ঢাকা ছাড়ায় এবং রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় ব্যবসা অচল হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে শান্তিনগরের সবজি বিক্রেতা নাহিদ হাসান বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে কিছু শাক-সবজি কিনে আনলেও, তা বিক্রি করতে পারিনি। আমি এক কেজি মূলা ২০ টাকায়, শসা ২৫ টাকায় এবং বেগুন ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। কিছুদিন আগেও এগুলোর দাম দ্বিগুণ ছিল।’
গত কয়েকদিনে বিক্রি অনেক কমে গেছে বলে ইউএনবিকে জানিয়েছেন কাওরানবাজারের সবজির পাইকার সোবহান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘সাধারণ ছুটির ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকা ছেড়ে গেছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এখন সবজির ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না।’
‘সরবরাহ নিয়ে কোনো সমস্য নেই, মূল সমস্যা ক্রেতার অভাব,’ যোগ করেন তিনি।
সোবহান বলেন, করোনাভাইরাস আতংকে অনেক পাইকার দোকান খুলছেন না এবং লোকসানের অভাবে অনেকে জেলার পাইকারদের কাছ থেকে একবারে বেশি সবজি কিনছেন না।
বিক্রি কমে গেছে সুপারশপগুলোতেও।
মগবাজারে অবস্থিত মীনা বাজারের সেকশন ইনচার্জ রাসেল হোসেন জানান, গত কয়েকদিনে তাদের বিক্রি এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আতংক শুরু হওয়ার পর আমাদের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর তা কমে গিয়েছে।’
তবে করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন ঘোষণা করা হতে পারে এমন আশংকায় অনেকে অতিরিক্ত ক্রয় করায় ঢাকায় কিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজ রবিবার (২৯ মার্চ) বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪৫ টাকায়।
এছাড়া আলুর দাম কমেছে কেজি প্রতি ২ টাকা এবং এক হালি ডিমে দাম কমেছে ৫ টাকা।
এদিকে টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহের তুলনায় প্রতি কেজি চিকন চালের দাম ৫৫-৬৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০-৬৮ টাকা এবং মোটা চালের দাম ৩৮-৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০-৫০ টাকা।
মজুদদার ও পাইকাররা জানান, অনানুষ্ঠানিক লকডাউনের কারণে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহে প্রভাব ফেলছে।
রাজশাহীর একজন মজুদদার খাদেমুল ইসলাম ইউএনবিকে জানিয়েছেন, শ্রমিকের অভাবে তারা ঢাকায় সবজি পাঠাতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস আতংকের কারণে শ্রমিকরা এখন কাজ করতে চাইছেন না। এজন্য আমরা ঢাকায় পণ্য পাঠাতে পারছি না। এছাড়া ঢাকার পাইকারি বাজারেও আমরা পণ্যের যথাযথ দাম পাচ্ছি না। দাম কমে যাওয়ায় কৃষকরাও সবজি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন।’
যশোরের মজুদদার তাজউদ্দিন বেপারী এবং মিজানুর রহমান জানান, করোনাভাইরাস আতংকের কারণে তাদের সবজি ব্যবসা প্রায় অচল হয়ে গেছে।
তাজউদ্দিন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও আমরা প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রাক শাক-সবজি ঢাকায় পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন গ্রাহক চাহিদা না থাকায় ২-৫ ট্রাক পাঠাচ্ছি।’
তিনি আরও জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পটল ও বেগুনের দাম ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়া এক ভ্যান বোঝাই পেঁপে এখন বিক্রি হচ্ছে ২,০০০- ২,২০০ টাকায়, আগে যার দাম ছিল ৩,৫০০-৪,০০০ টাকা।
বাংলাদেশ এগ্রো – প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. ইকতাদুল হক জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ তাজা শাকসবজি ও ফল রপ্তানি হলেও, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
‘কয়েকদিন আগে পণ্য লোড ও আনলোডের সময় পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে বিভিন্ন জেলা থেকে আমরা অভিযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর সমস্যার সমাধান হয়েছে,’ বলেন ইকতাদুল হক।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ইউএনবির রাজশাহী ও যশোর প্রতিনিধি)