এক বছর থেকে সংস্কার কাজ চলায় প্রায় সময়ই ফাঁকা থাকে বৃহৎ এই টার্মিনালটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ অঞ্চলে অধিকাংশ বাস নগরীর জাঙ্গালিয়া থেকে শুরু করে কচুয়া চৌমুহনী পর্যন্ত সড়কের ওপর স্ট্যান্ড বসিয়ে দিনে-রাতে যাত্রী পরিবহন করছে। এতে যানজট লেগে থাকার কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। এছাড়া নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে সকল ট্রান্সপোর্টের বাস-মিনিবাস স্টপেজ করে যাত্রী উঠা-নামা করছেন এবং সড়ক বন্ধ করে পরিবহন ঘুরাচ্ছেন। এতে করে টমছম ব্রিজ থেকে সড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
ব্যস্ততম সড়কের ওপর অবৈধ বাসস্ট্যান্ড করে দীর্ঘদিন যাবৎ যাত্রী পরিবহন করলেও সিটি করপোরেশন এবং পুলিশ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। টার্মিনাল ব্যবহার না করে সড়কের ওপর বাসস্ট্যান্ড বসিয়ে গত কয়েক বছরের যাত্রী পরিবহন করছে।
প্রায় এক বছর ধরে আন্তজেলা এই বাস টার্মিনালের সংস্কার কাজ চলছে। টার্মিনালের ভেতরের ঢালাই এবং সীমানা দেওয়াল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে এক বছর ধরে এই উন্নয়ন কাজ চললেও এখনও টার্মিনালের প্রবেশ পথের সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। গর্ত এবং খানাখন্দে সামনের অংশটি বেহাল দশা। বৃষ্টির পানি আর কাদায় সড়ক একাকার হয়ে পড়ছে। এতে যাত্রীরাও ভোগান্তিতে পড়ছেন।
এছাড়া টার্মিনালে যাত্রী ছাউনি এবং কাউন্টারের একমাত্র ভবনের অবস্থা জরাজীর্ণ। সম্প্রতি ভবনটির চারপাশে রং করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। শৌচাগারেরও সুব্যবস্থা নেই। নিচ তলায় যাত্রীদের বসার স্থান নেই, সেইসাথে চলে মশার উপদ্রব।
পরিবহন শ্রমিক এবং টার্মিনাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, টার্মিনালের উন্নয়ন কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ লুট হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০-২৫টি ট্রান্সপোর্টের প্রায় ৬০০-৭০০ বাস-মিনিবাস টার্মিনাল ব্যবহার করে থাকে। উপকূল, যমুনা, মদিনা, রয়েল, এশিয়া এয়ারকন, এশিয়া ট্রান্সপোর্ট, প্রিন্স, কুমিল্লা সুপার, দোয়েল, বলাকা, সোহাগ, শাহআলী সুপার, নাঙ্গলকোট সুপার, লাকসাম সুপারসহ ২০-২৫টি পরিবহন রয়েছে। এর মধ্যে উপকূল, রয়েল কোচ, এশিয়া এয়ারকন, এশিয়া ট্রান্সপোর্ট এবং প্রিন্স টার্মিনালের বাইরে গিয়ে নিজস্ব বাসস্ট্যান্ড দিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে। সড়কের পাশে পার্কিং এবং স্ট্যান্ডে বাস প্রবেশে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
যানজটে ভুক্তভোগী কয়েকজন যাত্রী ও নগরবাসী বলেন, দ্রুত টার্মিনালের সংস্কার কাজ শেষ করে সড়কের পাশে থাকা স্ট্যান্ডগুলো বাস টার্মিনালে স্থানান্তর করলে যানজট থাকবে না।
জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালের সার্বিক সমস্যা নিয়ে কুমিল্লা জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ কবীর আহাম্মদ জানান, জাঙ্গালিয়া আন্তজেলা বাস টার্মিনালের অধীনে যে পরিমাণ বাস আছে, সেই পরিমাণে জায়গা অপ্রতুল। অধিগ্রহণ করে বাস টার্মিনালের সীমানা বাড়ানো প্রয়োজন। অধিগ্রহণ করে আয়তন বড় না করলে সবগুলো ট্রান্সপোর্টের বাস টার্মিনালে পার্কিং করা সম্ভব হবে না। সেই সাথে যাত্রীদের বসার স্থান এবং যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালে বাস টার্মিনালের সংস্কার কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং সিটি মেয়রের কাছে দাবি জানিয়েছি এই টার্মিনালের অধিগ্রহণ প্রয়োজন। এই সংস্কার কাজের সাথে আরও ৪ কিংবা ৫ একর জমি সংযুক্ত করে অধিগ্রহণ করার জন্য। তা না হলে টার্মিনালের আওতাধীন যে পরিমাণের বাস আছে তার শতকরা ৬৫ বাসও পার্কিং করা সম্ভব হবে না। এদিকে টার্মিনালের সামনের সড়কটির ফোর লেনের কাজ করা হচ্ছে। ওই ফোর লেনের কাজের জন্যেও টার্মিনালের বিশাল একটি অংশ ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
অধ্যক্ষ কবীর আহাম্মদ বলেন, অধিগ্রহণ না করলে সড়কের পাশে থাকা বাস স্ট্যান্ডগুলো টার্মিনালে আসার সুযোগ পাবে না। পরিবহনের মালিকরা বাধ্য হয়ে সড়কে বাস পার্কিং এবং স্টপেজ করছে। এদিকে জায়গা না পেয়ে নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ড পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। সরকারের দেয়া জায়গা রেখে বিশাল পরিমাণের অর্থ ভাড়া দেয়ার প্রয়োজন নেই। টার্মিনালে বাস পার্কিং এবং যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা হলে সবাই ব্যক্তিগত স্ট্যান্ড ছেড়ে দিয়ে চলে আসবে আশা করি।
তবে জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা জানান, বাস মালিকরা টার্মিনালের সংস্কার কাজ আরম্ভ হওয়ার আগ থেকেই টার্মিনাল থেকে বের হয়ে গিয়ে সড়কের পাশে অতিরিক্ত যাত্রীর লোভে স্ট্যান্ড করেছে, যা অবৈধ। স্টপেজে যাত্রী না নামিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে গিয়ে যাত্রী পরিবহন করছেন এবং সড়ক বন্ধ করে ঘুরাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
টার্মিনাল সংস্কারের ব্যাপারে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালের সংস্কার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সামনের বাকি অংশটির বড় অংশটা সড়ক ও জনপথ বিভাগের। সড়কের ফোর লেনের এই অংশের কাজটি শেষ হলে টার্মিনালের সংস্কারের পুরো কাজটা শেষ করতে পারবো।
অধিগ্রহণ নিয়ে তিনি বলেন, টার্মিনাল অধিগ্রহণের বিষয়ে স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসকের সাথে কয়েক দফা কথা হয়েছে। টার্মিনালের পাশের সম্পত্তিগুলো ব্যক্তি মালিকানা হওয়ায় জায়গার দাম নির্ধারণ করে অধিগ্রহণ করতে হবে। তবে আশা করি খুব তাড়াতাড়ি টার্মিনাল সম্প্রসারণ করে যানজট নিরসন করতে পারবো।