বর্তমান নগদ অর্থ সংকটের মধ্যেই বিদ্যুৎ খাতের স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বেশিরভাগ কর্মকর্তা মনে করেন, ভারতের ঝাড়খণ্ডের আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে সরকারকে প্রতি মাসে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিডিবির এক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘যদি আদানির চুক্তি পুনর্বিবেচনা এবং শুল্ক হ্রাস করা হয়, তবে সরকার এখন আদানিকে যে অর্থ দেয় তার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সাশ্রয় করা সম্ভব।’
আরও পড়ুন: ২০৩৫ সালের মধ্যে হাইড্রোজেন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় বাংলাদেশ: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৭ সালের নভেম্বরে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২৫ বছরের বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সই করে বাংলাদেশ সরকার। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ।
আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও ভারত থেকে প্রায় ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে বাংলাদেশ। যার প্রায় অর্ধেক ভারতের বেসরকারি খাত থেকে এবং বাকি অর্ধেক সরকারি কেন্দ্র থেকে। তবে এর সবগুলোই কয়লাভিত্তিক বা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ।
বিপিডিবির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট-ঘণ্টা) আমদানিতে প্রায় সাড়ে ৫ টাকা, ভারতের বেসরকারি খাত থেকে প্রতি ইউনিট সাড়ে ৮ টাকা এবং আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম প্রায় ১৫ টাকা পড়ছে।
বিপিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, 'এর অর্থ হচ্ছে ভারত সরকারের ব্যবস্থাপনায় আমদানির গড় ব্যয়ের তুলনায় আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে বাংলাদেশকে খরচ করতে হয় প্রায় দ্বিগুণ অর্থ।’
সরকার যদি চুক্তি পুনর্বিবেচনা করতে চায় তবে এখনই তা করার উপযুক্ত সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই পুনর্বিবেচনা বাংলাদেশের বিশাল পরিমাণ অর্থের সাশ্রয় করবে।
আরও পড়ুন: নিম্নমানের বিদ্যুৎ প্রিপেইড মিটারের বিষয়ে তদন্তে মন্ত্রণালয়কে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ
বাংলাদেশের অনেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞও আদানির চুক্তির সমালোচনা করছেন। তারা বলেন, বর্তমানে বিপিডিবিকে বছরে ১২০ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হয় এবং ২৫ বছরে পরিশোধ হবে ৩০ বিলিয়ন ডলার।
চুক্তি পুনর্বিবেচনা করা হলে এবং শুল্ক অর্ধেক করা গেলে ২৫ বছরে বিপিডিবি সাশ্রয় করতে পারবে প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় এবং ভারত থেকে উচ্চমূল্যে আমদানির কারণে বিপিডিবির বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিপিডিবি) সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, সরকারের উচিত অবিলম্বে আদানিসহ সব অযাচিত চুক্তি পুনর্বিবেচনার ব্যবস্থা নেওয়া।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার পর গত বছর আদানি গ্রুপ বিদ্যুৎ রপ্তানিতে বিদ্যুতের দাম কমাতে রাজি হয়। কিন্তু বিশেষ প্রয়োজনে এ ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রতি মাসেই বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের জন্য ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে আলোচনায় বসতে হয় বিপিডিবিকে।
বিপিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, 'তবে আমাদের পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে এই চুক্তির স্থায়ী সমাধান দরকার।
আরও পড়ুন: নিরবচ্ছিন্ন বিল পরিশোধে বিদ্যুৎ বিভাগকে নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বললেন নসরুল