বাগেরহাটে বাণিজ্যিকভাবে দেশি-বিদেশি পাখির প্রজণন খামার গড়ে তুলেছেন শিল্পপতি ফজলুল করিম। খামারে এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির বিদেশি পাখির ডিম থেকে ছানা ফুটেছে। এই পাখি প্রেমিক এখন দেশ-বিদেশে পাখির বাণিজ্য করতে চান।
ফজলুল করিমের মতে, পাখি অনেক বড় শিল্প এবং পাখি বিকিকিনি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
বাগেরহাট সদর উপজেলার উৎকুল গ্রামে ‘এভারগ্রিন বার্ড পার্ক এ্যান্ড রিসোর্ট’ নামে এই পাখির খামার গড়ে তোলা হয়েছে। সালফার কাকাতুয়া, ম্যাকায়, ব্লুগোল্ড, আফ্রিকান গ্রেপ্যারোট, গ্রিন ইউন ম্যাকায়, নিকোবার পিজিওয়ার, কেরি হেডেট প্যারেন্ট, সান কনিউর, জেন্ডে কনিউর এবং মুয়ুরসহ দেশ-বিদেশের বিভন্ন প্রজাতির পাখি রয়েছে এই খামারে। এখানে যে সব প্রজাতির পাখি রয়েছে তার মধ্যে একজোড়া সালফার কাকাতুয়ার মূল্য প্রায় আট লাখ এবং এক জোড়া গ্রিন উইনের মূল্য প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা।
এরই মধ্যে ৮ প্রজাতির বিদেশি পাখির ডিম থেকে প্রায় অর্ধশত বাচ্চা ফুটেছে খামারে। এশিয়া মাহাদেশের মধ্যে এই প্রথম সম্প্রতি এই খামারে সালফার কাকাতুয়ার ডিম থেকে একটি বাচ্চা ফুটেছে। মেল এবং ফিমেলের জন্য প্রজণনের উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারার কারণে সালফার কাকাতুয়ার ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে বলে মনে করেন পাখি প্রেমিক ফজলুল করিম।
খামারে গিয়ে দেখা গেছে নানা রঙ-বে রঙের পাখি। পাখির কিচিমিচি ডাক আর কোলাহলে গোটা খামার মুখরিত হয়ে উঠেছে। দৃষ্টিনন্দন সেডে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্য আলাদা করে কক্ষ তৈরি করা হয়েছে।
কক্ষের সামনে পৌছাতেই পাখি প্রেমিক ফজলুল করি,ম পাখির নাম ধরে ডাক দিলে উত্তর দিচ্ছে পাখি। লোহার গেটের তালা খুলে কক্ষের ভিতর ঢুকলেই ফজলুল করিমের কাছে এসে হাত থেকে খাবার খাচ্ছে পাখি।
মনিবকে দেখে পাখি যেন খাঁচাবন্দী জীবন থেকে খোলা আকাশে আসতে চায়। একটি সালফার কাকাতুয়াকে ফজলুল করিমের মুখমন্ডলে তার ঠোঁট বুলিয়ে নানাভাবে আদার করতে দেখা গেছে। মানুষ এসে ঘুরে দেখতে পারবে এই খামারের পাখি।
খামারটিতে দেশ-বিদেশের ১৮টি প্রজাতির পাখি রয়েছে। বর্তমানে পাখির মোট সংখ্যা ১৫০টি। এক হাজার পাখি লালন-পালন করা যাবে এমনভাবে এই খামারটি তৈরি করা হয়েছে। খামারে ১২টি বড় সেড রয়েছে ৬৮টি কক্ষ আর ৬৬৫টি খাঁচায় পাখি রাখা হয়।
এসব পাখিদের খাবারের তালিকায় রয়েছে রাজকীয় খাবার। আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙ্গুর, আম, কলা, গম, ভুট্টা, কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, সুর্যমুখীর বীজ, কুসুম ফুলসহ বিভিন্ন ফলের বীজ। সেই সাথে নানা ধরণের সবজিও রয়েছে খবারের তালিকায়। এসব খাবার ব্যয়বহুল হলেও পাখিদের জন্য সব কিছু করা সম্ভব বলে মনে করে পাখি প্রেমিকরা। পাখির এইসব খাবার বিকিকিনির মধ্যে দিয়েও হতে পারে বাণিজ্য।
নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে ফজলুল করিম ২০১৩ সালে এভারগগ্রিণ নামে এই ফার্মটি গড়ে তুলেন। প্রায় ৫০ বিঘা জমির উপর এই খামারটি নির্মাণ করা হয়। এখানে পাখি প্রজণন খামার, বিদেশি ফল ড্রাগন, গরুর খামার, বিভিন্ন ফল, সবজি, বিভিন্ন মাছ এবং ডরমেটরিও রয়েছে। বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে খামারটিতে।
ফজলুল করিমের বাড়ি বাগেরহাট সদরে। তিনি খুলনা বিএল কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে স্নাতক করেছেন। নানা ধরণের ব্যবসার সাথেও তিনি জড়িত। ১০ বছর বয়সের সময় থেকে পাখির প্রতি তার ভালোবাসা। তখন থেকে পাখি পুষতে শুরু করে ফজলুল করিম। সেই ভালোবাসা থেকে এখন বাণিজ্যিকভাবে পাখি প্রজণন খামার গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানালেন ফজলুল করিম।
খামারের মালিক ফজলুল করিম জানান, শিশু বয়স থেকেই পাখির প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা কাজ করতো। সেই থেকেই নানাভাবে তিনি পাখি লালনপালন করেছেন। খাঁচায় রেখে বনের পাখিকে পোষ মানিয়েছেন। খাঁচার পাখিও তাকে আপন করে নিয়েছে। সেই থেকে পাখির প্রতি ভালোবাসা আরো বাড়তে থাকে। সেই কারণেই এই খামার গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
খামারে পাখির সাথে কথা বলতে বলতে ফজলুল করিম আরো জানান, প্রকৃতির সাথে পাখি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশে পাখি পোষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশে রয়েছে। পাখি শিল্প হিসেবে নিলে পাখি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক অর্থ আয় করা সম্ভব। একই সাথে পাখির খাবার উৎপাদন করে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করা যেতে পারে।
বাগেরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান জানান, এই খামারে অনেক বিরল প্রজাতির পাখি রয়েছে। বিভিন্ন দেশের নামকরা অনেক পাখি রয়েছে এখানে। পাখি প্রেমিকরা ছাড়া এই সব পাখির গুরুত্ব বোঝা সম্ভব নয়।
তিনি জানান, বনের পরিবেশ তৈরি করে এখানে খামার গড়ে তোলা হয়েছে। পাখির প্রজণনের সুবিধার্থে প্রতি জোড়া পাখির জন্য আলাদা আলাদা বাসা তৈরি করা হয়েছে।
লাইসেন্স নিয়েই ফজলুল করিম খামারটি তৈরি করেছেন প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, এই খামার দেখে অনেকে চিন্তাভাবনা করছে পাখির খামার করার। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে তারা পাখির জন্য বিভিন্ন সময় নানা পরামর্শ দিচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
খামারের নারী শ্রমিকরা জানালেন, তারা বিভিন্ন সময় খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে এবং পাখিকে নানা ধরণের খাবার দেয়। তাদেরও ভালো লাগে পাখি দেখতে।