ফাইভজি ব্যবহারের মাধ্যমে আগামীতে অতি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প ব্যবস্থাপনাকে কিভাবে নিরাপদ করা সম্ভব হবে তার একটি বড় প্রদর্শনী দেখানো হয়েছে স্পেনের বার্সেলোনায় চলমান মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে (এমডব্লিউসি)।
বিশ্বের সব টেলিকম কোম্পানির চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন স্পেনের রাজা ফিলিপে। স্পেনের প্রেসিডেন্ট প্রেডো সানচেজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। টেলিকম শিল্পের বড় ক্রীড়ানকদের বার্ষিক এই সমাবেশে প্রায় ৮০ হাজার প্রতিনিধি প্রত্যাশিত।
মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে ফাইভজি প্রযুক্তিতে ভার্চুয়াল ইন্টারেক্টিভ অ্যাপ্লিকেশন, রোবট ক্লাস্টার, মনুষ্যবিহীন ড্রাইভিং, বুদ্ধিমান পরিধানযোগ্য সরঞ্জাম, বুদ্ধিমান টহল পরিদর্শন, বুদ্ধিমান ব্যাপক মাইনিং, স্মার্ট টানেলিং এবং কয়লা খনিতে অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে অনেক টেকনোলজি উদ্ভাবনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দিচ্ছে।
মূলত ফাইভজি এই বছরের কংগ্রেসে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে।
শিল্প জায়ান্টরা ফাইভজি প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় ব্যবহার শুধু শিল্প উৎপাদনেই নয়, মানুষের জীবনেও প্রদর্শন করছে। যেমন- ফাইভজি চালিত মনুষ্যবিহীন হেলিকপ্টার থেকে শুরু করে ঘরের কোনে থাকা ফাইভজি রাউটার প্রভৃতি।
আরও পড়ুন: ২০৩৩ সালের মধ্যে গৃহস্থালির ৩৯ শতাংশ কাজ স্বয়ংক্রিয় হতে পারে: বিশেষজ্ঞরা
মনুষ্যবিহীন হেলিকপ্টার প্রদর্শন করছে টি মোবাইল। এই হেলিকপ্টারটি কোন চালক ছাড়াই যাত্রীসহ নিরাপদে উড়তে ও অবতরণ করতে পারবে। এমনকি আকাশে ওড়ার সময় কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি টের পেলে নিকটস্থ নিরাপদ স্থান বেছে নিয়ে জরুরি অবতরণও করতে পারবে হেলিকপ্টারটি।
ফাইভজি রাউটার এখনকার রাউটারের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা হবে।
তারবিহীন এই রাউটারে শুধুমাত্র একটি কোডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অপারেটরের কাছ থেকে কোডের মাধ্যমে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবে। আর এই একটি রাউটারে যে ব্যান্ডউইথ থাকবে তা দিয়ে পরিবারের সব ধরনের স্মার্ট ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা সম্ভব হবে। ডিভাইস উচ্চগতির এছাড়া রাউটারটির বিস্তৃত ব্যবহার এবং স্মার্ট সিটির মডেলের প্রদর্শনী তো আছেই।
ফাইভজি’র আগামী ব্যবহার নিয়ে জিএসএমএ’র মহাপরিচালক ম্যাটস গ্রানার্ড মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের একটি সেমিনারে বলেন, ফাইভজি আগামীতে সাধারণ জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে বড় শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থায় কি অসাধারণ পরিবর্তন আনবে সেটা এই মুহুর্তে উপলব্ধি করা কঠিন। এবারের এমডব্লিউসিতে ‘স্মার্ট মাইনিং’ প্রকল্প দেখিয়েছে সেই পরিবর্তন কি ধরনের হতে পারে। আগামীতে নিরাপদ, সহজ, সাশ্রয়ী ও মানবিক জীবন ব্যবস্থা, বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ফাইভজির কার্যকর ব্যবহারের যে প্রদর্শন হলো তা নিশ্চিতভাবেই পুরো বিশ্বকে ফাইভজি ব্যবহারের ক্ষেত্র প্রস্তুতে নিশ্চিতভাবে সহায়তা করবে।
নতুন ধরনের ডিভাইস, নতুন ধরনের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, এমনকি আগামীতে কি ধরনের প্রযুক্তি আসছে সে বিষয়গুলোও তুলে ধরা হচ্ছে প্রদর্শন কেন্দ্রগুলোতে।
ইনটেলের প্যাভিলিয়নে দেখা গেল, আগামী প্রজন্মের কম্পিউটারের সম্ভাব্য প্রসেসর। অরেঞ্জ দেখিয়েছে অদূর ভবিষ্যতের স্মার্ট প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের আবেগ কিভাবে মিশে যাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যাদুর স্পর্শে।
আরও পড়ুন: ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় রোবোট্যাক্সির সফল পরীক্ষা চালাল অ্যামাজনের জুক্স
এছাড়াও ভেলোসিটি উদ্যেগকে সামনে রেখে এবারের আয়োজনে বিশ্বের প্রায় সব বড় বড় প্রতিষ্ঠান স্মার্ট প্রযুক্তির প্রদর্শনকেই প্রাধান্য দিয়েছে। ডিভাইস যেমন- স্মার্টফোন, স্মার্ট ওয়াচ ও স্মার্ট কম্পিউটার নির্মাতারা তাদের আগামী দিনের ডিভাইসে স্মার্ট প্রযুক্তি কিভাবে সংযুক্ত হবে তার প্রদর্শন করেছেন।
যারা ডিভাইসের মূল উপাদান যেমন- মাইক্রেচিপ, চিপসেট, সেমি কন্ডাকটর, প্রসেসের, মাইক্রো প্রসেসর তৈরি করছেন তারাও সামনে এনেছেন স্মার্ট প্রযুক্তি। সব মিলিয়ে আগামীর স্মার্ট পৃথিবী হচ্ছে এবারের মূল আকর্ষণ।
বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তৈমুর রহমান ইউএনবিকে বলেন, মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস ২০২৩ এ বছর বিশেষ প্রযুক্তির ওপর নয় বরং উদ্ভাবনী সেবার ওপর বেশি জোর দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়াও এটি নেটওয়ার্কের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। উদ্ভাবনী পরিষেবার কিছু উদাহরণ হল যে কীভাবে বেশিরভাগ টেলিকম প্রযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করতে পারে যেমন লজিস্টিক এবং ড্রোনের মাধ্যমে ডেলিভারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং রোবোটিক্সের মাধ্যমে নিরাপত্তা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, নেটওয়ার্কে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সামগ্রিক খরচ কমানোর কিছু উদাহরণ হল- দক্ষ নেটওয়ার্ক ডিজাইন সফ্টওয়্যার, সরলীকৃত নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার সমাধান ও নেটওয়ার্ক উপাদানগুলির শক্তি খরচ হ্রাস ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: মাইক্রোসফট বিংয়ের নতুন সংস্করণে থাকছে চ্যাটজিপিটি প্রযুক্তি