রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় খালের ওপর নির্মিত সেতুর নিচ থেকে মাটি ধসে একাধিক স্থানে দেবে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। মাঝের অংশ সম্পূর্ণভাবে দেবে গেছে। দুই সপ্তাহ ধরে এমন পরিস্থিতি হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হলেও হালকা যান চলাচল অব্যাহত থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।
জানা যায়, দেবগ্রামের তেনাপচা আশ্রয়ন ইউজেড-আরএইচডি (পিয়ার আলী মোড়) সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন। সড়কের ৫২৩ মিটার চেইনেজে অবস্থিত দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে খালের ওপর প্রায় ১৫ লাখ টাকা ব্যায়ে ১২ মিটার দৈঘ্যের ২ ভেন্ট বক্স কালভার্ট নির্মাণ হয়। কালভার্টের তলদেশের মাটি ধসে যাওয়ায় কয়েক স্থানে দেবে গেছে। ফেলে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দ্রুত সেতুটি মেরামত বা পুনঃনির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলজিইডির গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী গত ১৬ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ীর তত্ত্বাবধানে গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা এলাকায় পদ্মা নদী থেকে উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের কেউটিল হয়ে বয়ে যাওয়া খালটি ফরিদপুর পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘের খনন কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলা এলাকায় ছিল প্রায় ১১ কিলোমিটার।
আরও পড়ুন: খুলনায় ৮০০ কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্যের সম্ভাবনা
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পর্যাপ্ত জায়গা ও ঢালু না রেখে খাল খনন করা হয়। এমনকি সেতুসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে গার্ডার, সিসি ব্লক, জিওব্যাগ সহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থার প্রয়োজন থাকলেও করা হয়নি। ফলে গত দুই বছরে বর্ষাকালে খাল দিয়ে পানি প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত হওয়ায় সেতুর নিচে এবং পাশ থেকে মাটি ধসে যায়। তেনাপচা এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে খালের দুই পাশ বেশি ধসে পড়ে। এতে ৬-৭টি পরিবার অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়। আরও বেশ কিছু পরিবার ভাঙন ঝুঁকিতে পড়ে।
শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, তেনাপচা খালের ওপর নির্মিত সেতুটির মাঝখানে এবং একপাশ ভেঙে দেবে গেছে। সেতুর নিচে একাধিক স্থান ভেঙে গেছে। সেতুতে ওঠতে বাম পাশের বেশ জায়গা নিয়ে মাঠি সরে গেছে। ওই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে মাহেন্দ্র, রিকশা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মতো হালকা যান এবং পথচারীরা আসা যাওয়া করছে।
এ সময় উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী ও উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কার সিদ্দিক নসিমনে বিভিন্ন মেহগনি গাছের গুড়ি ফেলছেন।
আসাদ চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে তাদের খালের দুই পাশে প্যালাসাইডিং করতে বলেছে। কাজ শেষে তাদের বিল পরিশোধ করা হবে।
আসাদ চৌধুরী জানান, অপরিকল্পিত খননে দুই বছর ধরে খালের দুই পাড় ধসে পড়ছে। ছোটভাকলার আব্দুল আজিজ মাস্টারের বাড়ির কাছ থেকে দেবগ্রামের প্রয়াত চেয়ারম্যান পিয়ার আলীর বাড়ি হয়ে তেনাপচা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন হয়েছে। এর মধ্যে তেনাপচা এক কিলোমিটার এলাকায় বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। খাল পাড়ে তার বাড়ি থাকায় তিনিও ঝুঁকিতে বাস করছেন।
অপরিকল্পিত খননের কারণে সেতুটি ধসে পড়ছে বলে জানান।
আরও পড়ুন: যমুনার চরে ভেড়া পালনে শত শত নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন