জুলাই ও আগস্টে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রপ্তানি খাত স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অক্টোবরে প্রায় ১৯ শতাংশ রপ্তানি আয় বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।
শুধু অক্টোবর মাসেই বাংলাদেশ ৪১৩ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। যা গত বছরের একই মাসের চেয়ে ৬৫ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি। জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর সময়ে দেশের রপ্তানি আয় ছিল যথাক্রমে ৩৮২ কোটি, ৪০৭ কোটি ও ৩৮৬ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ১ হাজার ১৬৬ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের ১ হাজার ৮৩ কোটি ডলার থেকে ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। জুলাই-আগস্ট সময়ে রপ্তানি আয় হয়েছে ৭৮৫ কোটি ডলার।
জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে নিটওয়্যার রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৩৫ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের ৪৯৪ কোটি ডলারের তুলনায় ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। ওভেন পোশাক রপ্তানি ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪১৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৩৮৮ কোটি ডলার।
রপ্তানিকারকরা সাম্প্রতিক প্রত্যাবর্তনের জন্য শ্রমিক অসন্তোষ, কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে আটকে থাকা অর্ডারের বিলম্বকে দায়ী করেছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় পুঁজিবাজারে তেজিভাব
বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক ইউএনবিকে বলেছেন, এই ঝুলে থাকা কার্যাদেশগুলোর অনেকগুলো গত মাসে পাঠানো হয়।
তারা আরও বলেন, শীত ও বড়দিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মৌসুমি চাহিদাও রপ্তানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে, যা মূল্য ও পরিমাণ উভয় ক্ষেত্রেই বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিউএজ গ্রুপের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন যে, তাদের কারখানাগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় কাজ করছে। ‘আমরা ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বুকিং পেয়েছি এবং আশা করি অন্যান্য কারখানাগুলোও একইভাবে কাজ করছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, কাজের অর্ডার সুরক্ষিত করা খ্যাতি, গুণমান এবং সম্মতির মানের উপর নির্ভর করে।
একটি সরকারি নথিতে দেখা গেছে, বৈশ্বিক বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতির পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্য সংকোচন সত্ত্বেও ২০২৪ সালে পণ্যদ্রব্য বাণিজ্যের পরিমাণ ২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ায় ভোক্তাদের আরও পণ্য কেনার জন্য উৎসাহিত করার সঙ্গে সঙ্গে পুনরুদ্ধার আশা করা হচ্ছে।
উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির (ইএমডিই) উন্নত অর্থনীতির তুলনায় দ্রুত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালে উল্লেখযোগ্য সংকোচনের শিকার হওয়া ইউরোজোন ২০২৫ সাল থেকে প্রায় ৩ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধিসহ ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে আনুমানিক ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আর আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে এটি ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপব্যবহারে সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোর ক্ষতি ১৬৬৩.৩৮ কোটি টাকা
চীনের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২০২৫ সালে ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ২ দশমিক ৮৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারতের রপ্তানি ২০২৩ সালের ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ সংকোচন থেকে ২০২৫ সালে প্রায় ৪ শতাংশে দৃঢ়ভাবে পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিপরীতে, যুক্তরাজ্যে ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে সংকোচনসহ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২৭ সাল পর্যন্ত পরিমিত প্রবৃদ্ধির হার ২ শতাংশের নিচে থাকবে।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪-২৭ জুড়ে প্রায় ৩ শতাংশ স্থিতিশীল রপ্তানি বৃদ্ধির হার বজায় রাখবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
রপ্তানি পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানিও মাঝারি মেয়াদে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইএমএফের মতে, বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ প্রবৃদ্ধি ২০২৩ সালের সংকোচন থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়ে ২০২৪ সালে ৪ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে প্রায় ১৮ শতাংশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে, নির্দিষ্ট দেশের গতিশীলতা বিভিন্ন গতিপথ প্রকাশ করে। উদাহরণস্বরূপ, চীনের আমদানি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে শূন্য দশমকি ৯ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে, ভারতের আমদানি প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালে এবং তার পরেও ৬ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত অর্থনীতিতে আমদানি প্রবৃদ্ধি কম থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমনকি যুক্তরাজ্য ২০২৫ সালে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করবে বলে ধারণা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হয়রানি কমাতে অনলাইন কর পদ্ধতি সংস্কারের পরিকল্পনা এনবিআরের