ফেনী থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সোনাপুর, বারইয়ারহাট, ফেনী-লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ফেনী –পরশুরাম, সোনাগাজী রুটে বাস ও মিনিবাস চলাচল করে এসব পরিবহনে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। গত ৫ এপ্রিল থেকে চলমান লকডাউনের গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর থেকে অনেকে জীবিকার তাগিদে পেশা পরিবর্তন করেছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, জেলার ফেনী জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপ, আন্তঃ জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, ফেনী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নসহ একাধিক সংগঠন থাকলেও গত এক মাস ধরে চলা লকডাউনে কোন শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ। ফলে তাদের স্বাভাবিক জীবন বিপন্নের পথে।
ফেনী-সোনাগাজী মায়ের দোয়া পরিবহনের চালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন। প্রতিদিন যা আয় করতেন তা দিযে সংসার চালাতেন। স্ত্রী -দুই সন্তান নিয়ে ছোট একটা বাসায় ফেনীতে থাকতেন। করোনা ও লকডাউন তার সুখের সংসার এলোমেলো করে দিয়েছে। প্রতি মাসে বাস চালিয়ে অনায়াসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতেন কামাল। এখন লকডাউনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তিনি। মাসে ৪ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। তাই বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়ি সোনাগাজীর চর চান্দিয়ায় চলে গেছেন। গ্রামেই দিন মুজুরের কাজ করেন। যে দিন কাজ থাকে সে দিন খাবার জুটে, আর যে দিন কাজ থাকে না সেদিন উপোস থাকতে হয়।
আরও পড়ুন:ফেনীতে যুবলীগকর্মীর সাথে ধস্তাধস্তির ঘটনায় এসআই প্রত্যাহার
তার মতো আরেক বাস শ্রমিক আল আমিন, বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার বাসিন্দা। গত ১৭ বছর ধরে ফেনীতে বসবাসকারী, বাস চালক হিসেবে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। লকডাউনে গাড়ির চাকা না গোরায় স্বজনদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এক পর্যায়ে অনিশ্চয়তার মুখে এ পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হন। গত ১৫ দিন ধরে তিনি শহরের মহিপালে ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি করছেন।
বাস চালক আল আমিন জানান, বেশ কয়েক বছর চালকের সহকারী হিসেবে চাকরির পর গত চার বছর ধরে সুগন্ধা পরিবহনের বাস চালক হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮০০ টাকা বেতন পেলেও এখন সবজি বিক্রি করে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেতন পান।
মহিপাল সুগন্ধা বাসের চালকের সহকারী জসিম উদ্দিন এখন ভাড়ায় রিকশা চালান। আগের মত আয় হলেও রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয় বলে জানান।
লকডাউনে বেকার আরেক বাস চালক আলা উদ্দিন রাগ-ক্ষোভ প্রকাশ বরে বলেন, ‘লকডাউন’ কি শুধু আমাদের জন্য। প্রাইভেটকার-ট্রাক চলতে পারলে আমাদের হাত পা কেন বাঁধা হয়েছে। সরকারের কাছে অনুরোধ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালানোর অনুমতি দিক। না হলে সামনে ঈদ পরিবারের সামনে দাঁড়াতে পারবো না। জীবনে কখনও কারোর কাছে হাত পাততে হয়নি। কিন্তু এখন অসহায় হয়ে পড়েছি ইউএনবি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন