স্থানীয় চালকল মালিকরা বলছেন, সরকারিভাবে সংগ্রহ মূল্য বৃদ্ধি করা না হলে করোনার এ সময়ে লোকসান গুনে খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করা কঠিন হবে। এ জন্য সরকারিভাবে বোরো ধান-চাল সংগ্রহের মূল্য কেজিপ্রতি ২/৩ টাকা বোড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে, সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সরবরাহে উৎসাহ না থাকায় কৃষক পর্যায়ে ধান সংগ্রহ করা দুরূহ বলে মনে করছেন খাদ্য বিভাগ সংশ্লিষ্টরা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শেরপুর জেলায় এ বছর বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় – প্রতিকেজি ৩৬ টাকা দরে সিদ্ধচাল ২৫ হাজার ৬২ মেট্রিক টন ও ২৬ টাকা দরে আতপ চাল দুই হাজার ৫৫৮ মেট্রিক টন। এছাড়া ২৬ টাকা কেজি দরে ১৬ হাজার ৫০৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
সূত্রটি জানায়, প্রায় ৩ মাস আগে জেলার ৫৪৬ জন চালকল মালিক বোরো চাল সরবরাহ করার জন্য খাদ্যবিভাগের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। আর ধান সরবরাহের জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন ৮ হাজার ৫৯৮ জন কৃষক। কিন্তু সংগ্রহ অভিযানের সময় পার হলেও ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিদ্ধচাল সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ বা ১৭ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে, আতপ চাল লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ শতাংশ বা এক হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন এবং ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪০ শতাংশ বা ৬ হাজার ৬০৩ মেট্রিক টন।
জেলা চালকল মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা হলেও সরকারিভাবে এ বছর বোরো চাল সিদ্ধ প্রতিকেজি ৩৬ টাকা ও ধান ২৬ টাকা সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে। বাজারমূল্যের চেয়ে সরকারের মূল্য কম হওয়ায় চালকল মালিকরা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। মিলের লাইসেন্স ও জামানত বাঁচাতে বড় পুঁজির অটো মিল মালিকরা লোকসান মেনে বেশির ভাগ চাল সরবরাহ করেছেন। কিন্তু চাতাল মালিকরা (হাসকি মিলার) পারছেন না। খাদ্য বিভাগ বারবার তাগাদা ও চাপ দিলেও লোকসানও পুঁজি হারানোর শঙ্কায় চাতাল মালিকরা তাতে সায় দিচ্ছেন না।
স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজারে এখন বিআর-২৬, ব্রি ধান-২৮, হাইব্রিড তেজগোল্ড জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ এক হাজার ৬০ টাকা থেকে এক হাজার ৮০ টাকা দরে। আর সরকারি গুদামে ধানের মূল্য এক হাজার ৪০ টাকা মণ। বাজারেই ভালো দাম থাকায় কৃষকরা আর খাদ্যগুদামমুখী হচ্ছেন না।
নালিতাবাড়ীর বনকুড়া-সিধুলি গ্রামের কৃষক সুমন্ত বর্মন বলেন, বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ধানের সংগ্রহমূল্য আর বাজারমূল্য প্রায় সমান। বাজারে সহজেই ধান বিক্রি করা যায়। এতে ঝক্কি-ঝামেলাও কম। আর গুদামে ধান দিতে গেলে নির্দিষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা বজায় রাখতে হয়। অধিকন্তু পরিবহন খরচও বহন করতে হয়। তাই সরকারি গুদামে ধান দেয়ার চেয়ে বাজারে বিক্রিতেই সুবিধা বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাতালের এক মালিক বলেন, ‘করোনায় সবাই সরকারের ছাড় পাচ্ছে; কিন্তু চালকল মালিকরা লোকসানে সরকারকে চাল দিতে বাধ্য হচ্ছেন।’
ধান-চালের সরকারি মূল্য পুনর্বিবেচনা করে চাতাল মালিকদের পাশে দাঁড়াতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে শেরপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামীম হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে ধানের দাম বেশি। তাছাড়া বাজারগুলোতে ধানের আমদানিও কম। এতে চাল উৎপাদন খরচ যেমন অনেক বেড়ে গেছে, তেমনি কমেছে উৎপাদনও। তারপরও চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকদের বেশিরভাগ লোকসান দিয়ে চুক্তি অনুযায়ী গুদামে চাল সরবরাহ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সংগ্রহের মেয়াদ ১৫ দিন বাড়িয়েছে। এখন যদি চালের সংগ্রহমূল্য কেজিপ্রতি ২/৩ টাকা করে বাড়ানো হয়, তাহলে চালকল মালিকরা লোকসান কিছুটা কমিয়ে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করতে পারবেন।’
বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ খন্দকার বলেন, ‘বোরো সংগ্রহ অভিযানের মেয়াদ ১৫ দিন বাড়ানো হয়েছে। যেসব চালকল মালিক চুক্তি অনুযায়ী এখনও গুদামে চাল সরবরাহ করেননি, তাদের সরবরাহের জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। তারপরও তারা যদি চাল সরবরাহ না করেন, তাহলে সরকারের নির্দেশনানুযায়ী পরবর্তী মৌসুমগুলোয় ওইসব চালকলগুলোকে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করা থেকে বিরত রাখা হবে। প্রয়োজনে সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারে।
তবে চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকরা শেষ সময়ে হলেও যথারীতি চাল সরবরাহ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।