এরপর আর কোনো জনবসতি নেই। মাঝে মাঝে এই নদী পার হয়ে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার লোকালয়ে চলে আসে। সেই আকাশনীলা পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে।
উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন কলবাড়ি এলাকায় জেলা প্রশাসনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ২৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে আকাশনীলা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার।
জেলা শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে এটির অবস্থান। পর্যটক কেন্দ্রটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে প্রতি বছরই নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। এখানে ভিআইপিদের থাকার জন্য একটি গেস্ট হাউস তৈরি করা হয়েছে।
সুন্দরবন দেখার জন্য রয়েছে পরিবেশবান্ধব সোলার বোট। প্রকৃতি থেকে পাওয়া সামগ্রী দিয়ে তৈরি হচ্ছে কটেজ, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য স্থাপনা। মন চাইলে ফিসিং জোনে মাছ ধরতে পারবেন পর্যটকরা।
এছাড়া আছে ফিস মিউজিয়াম, হারবেরিয়াম (সংরক্ষিত শুষ্ক উদ্ভিদ নমুনা), সংগ্রহশালা (স্থানীয় সংস্কৃতির পরিচয় বহনকারী বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পণ্য-সামগ্রী)। ছোট-বড় নৌকায় করে সুন্দরবনের ভেতর প্রবেশের সুযোগ রয়েছে এখানে। মাথাপিছু ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিয়ে প্রায় এক থেকে দুই ঘণ্টা সুন্দরবন ঘোরা যাবে। সুন্দরবন দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। আর চারপাশে সুন্দরবনের গাছ-গাছালি, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রবেশ ফি মাত্র ২০ টাকা।
আকাশনীলার সৌন্দর্যের বর্ণনা করে পর্যটক সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র শামস ফারদিন দিহান বলেন ‘ওই যে সুন্দরবন! এতো কাছ থেকে সুন্দরবন দেখতে পাবো ভাবিনি। কি চমৎকার পরিবেশ! খুবই ভালো লেগেছে। মনটা ভরে গেছে। আর মাছ ধরার মজাইতো আলাদা।
পর্যটক অধ্যাপক সেলিনা সুলতানা বলেন ‘আকাশনীলায় একবার যে আসবে, তার প্রিয় স্থানের তালিকায় স্থান পাবে। এই পর্যটন কেন্দ্রটি সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনা করা গেলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হবে এটি।’
আকাশনীলায় ঘুরতে আসা কৃষ্ণ ব্যানার্জি বলেন, সুন্দরবনের বড় অংশটি সাতক্ষীরায়। কিন্তু সুদীর্ঘ সময় এখানে কোনো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে না ওঠায় পর্যটকরা নানা রকম বিড়ম্বনায় পড়তো। ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা সফরে এসে কোথাও বসারও জায়গা পেত না। এখন থেকে আকাশনীলায় আসতে পারবে। সেখান থেকে যেতে পারবে সুন্দরবনে।
সাতক্ষীরার প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট একেএম শহীদউল্যাহ জানান, ‘সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প সম্প্রসারণে আকাশনীলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার সবার মন কাড়বে এই কারণে যে, এখানকার সবকিছু পরিবেশ বান্ধব। এখানে প্রকৃতির সাথে একাকার হয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। মনোরম একটি পরিবেশ।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুর রহিম বলেন, কক্সবাজারসহ অন্যান্য জেলা পর্যটনকে ঘিরে বিকশিত হলেও সাতক্ষীরায় কখনও সেই সুযোগ ছিল না। সুন্দরবনের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা আকাশনীলার মাধ্যমে সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে এ জন্য জেলার রাস্তা-ঘাট তথা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। সাতক্ষীরা থেকে মুন্সিগঞ্জ সড়কটি নাজুক অবস্থা।
পরিপূর্ণতা পেলে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হবে আকাশনীলা।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, আকাশনীলা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার উপজেলা প্রশাসনের ইনোভেশন-ইন-পাবলিক সার্ভিসের একটি প্রকল্প। এ স্থানটি আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে প্রতি বছরই নতুন নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হচ্ছে। পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত করতে ‘আকাশনীলা’ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, ‘ভিআইপিদের থাকার জন্য এখানে একটি গেস্ট হাউজ তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ পর্যটকরা যাতে এখানে এসে রাত-যাপন করতে পারে সেজন্য কটেজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।’