ভৈরব সেতুর পিলার স্থাপনের জন্য ৩৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে। এজন্য ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কাছে এক কোটি টাকা চেয়েছে। তথ্যটি জানাজানি হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে ব্যয়ের হিসেব নিয়ে।
ভৈরব নদীর পূর্ব পাশ দিঘলিয়া উপজেলার নগরঘাট খেয়াঘাট থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত সেতুর ১৬ থেকে ২৮ নং মোট পিলার বসবে ১৩টি। এই ১৩টি পিলার স্থাপনের জন্য ওই এলাকার ৩৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তর করতে হবে। এজন্য ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ওজোপাডিকো) থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা।
সওজের একটি সূত্র জানায়, সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) থেকে গত অর্থবছরে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তরের জন্য ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডকে ৫০ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে দেয়া হয়। কিন্তু ৩৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তের জন্য ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড ব্যয় নির্ধারণ করেছে এক কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিটা বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তরের জন্য খরচ হবে ৩ লাখ টাকার উপরে। মোট ব্যয়ের সম্পূর্ণ অর্থ এক কোটি টাকা বুঝে না পাওয়ায় সওজ থেকে একাধিকবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তরের টেন্ডার আহ্বানে গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। যেকারণে খুলনাবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এ সেতুর পিলার স্থাপনের কাজে বিলম্ব হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ঘোষ বলেন, আমরা কোন অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ধরিনি। সিডিউলের রেট অনুযায়ী ৩৩টি বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তরের জন্য এক কোটি টাকা ব্যয় ধরেছি। গত অর্থ বছরে সওজের বাজেট কম থাকার কারণে তারা ৫০ লাখ টাকা পার্টলি বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা আমাদের অফিশিয়াল নিয়মানুযায়ী এগোচ্ছি।
আরও পড়ুন: রাস্তার কারণে বিয়ে হচ্ছে না অনেক তরুণ-তরুণীর!
বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে ভৈরব সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, ভৈরব সেতুর দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষে আমরা নিরলসভাবে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, গত ২১ আগস্ট সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও আমি দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাহাবুবুল আলমের সরকারি বাসভবনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ব্যক্তিগত দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে ১৬ থেকে ২৮ নং পিলারগুলো যে সব স্থানে স্থাপন করা হবে সে সব স্থানের কবরস্থান এবং বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো দ্রুত স্থানান্তরের ব্যাপারে আলোচনা করেছি।
আনিসুজ্জামান বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতা চেয়েছি। উনি আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ভৈরব নদীর পূর্ব পাশে নগরঘাট খেয়াঘাট থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত ৩৩ টি বৈদ্যুতিক খুঁটি দ্রুত স্থানান্তর করা জরুরি প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আমাদের অফিস থেকে গত জুন মাসে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর চিঠি দিয়েছি। প্রথমাবস্থায় নির্বাহী প্রকৌশলী ৩৩টি খুঁটি স্থানান্তরের জন্য ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে আমাদের জানিয়েছিলেন। আমরা সেই অনুযায়ী গত ২৮ জুন চেকের মাধ্যমে উনার (নির্বাহী প্রকৌশলী) বরাবর ৫০ লাখ টাকার চেক প্রদান করি। টাকা দেয়ার দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও খুঁটিগুলো স্থানান্তরের জন্য উনি এখনও পর্যন্ত টেন্ডার আহ্বান করেননি।
আরও পড়ুন: সেতু এখন মানুষের গলার কাঁটা!
কুয়েট শিক্ষার্থীরা তৈরি করলেন ‘কিলোফ্লাইট আলফা’ গাড়ি
তিনি বলেন, খুঁটিগুলো দ্রুত স্থানান্তর করা না হলে আমাদের পাইলিংয়ের কাজ পিছিয়ে পড়বে। এখন উনি বলছেন খুঁটিগুলো স্থানান্তরে ব্যয় হবে এক কোটি টাকা। খুঁটিগুলো স্থানান্তরের মোট ব্যয়ের এক কোটি টাকা না পেলে টেন্ডার আহ্বান করা সম্ভব হবে না। পরবর্তী বাজেটে অর্থ বরাদ্দ পেলে আমরা বাকি টাকা দিতে রাজি হয়েছি। তারপরও উনি টেন্ডার আহ্বানে সময়ক্ষেপণ করছেন।
তিনি জানান, ভৈরব নদীর পশ্চিম পাশ অর্থাৎ নগরীর মহসিন মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত যে সকল স্থানে সেতুর পিলার স্থাপন করা হবে ওই সকল স্থানের বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো স্থানান্তরের টেন্ডারের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।