নতুন আইন পাশের মাধ্যমে ইউক্রেনের বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে নিজেদের দখলকে সুরক্ষিত করার জন্য আরও একধাপ এগিয়ে গেল রাশিয়া। এই আইনের মাধ্যমে মস্কো ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের অনুমোদন পাবে। অন্যদিকে এই পদক্ষেপের কারণে মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে পশ্চিমারা।
রাশিয়ার এই নতুন আইন কোনো রকম বিচার-বিবেচনা ছাড়াই অনুমোদন দেয়া হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা আশঙ্কা করছে এই আইনটি ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের জন্য একটি অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করতে পারে রাশিয়া। কেননা এর একদিন আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে।
সোমবার গভীর রাতে পুতিন ডিক্রিতে স্বাক্ষর করার পরপরই সাঁজোয়া বাহিনীর কনভয়কে বিচ্ছিন্নতাবাদী-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল জুড়ে ঘুরতে দেখা গেছে। তবে তারা রাশিয়ান কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হয়নি।
আরও পড়ুন: পূর্ব ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি রাশিয়ার, সেনা মোতায়েনের নির্দেশ
এদিকে, রুশ কর্মকর্তারা এখনও বিদ্রোহী অধ্যূষিত পূর্বাঞ্চলে কোনো সেনা মোতায়েনের কথা স্বীকার করেননি। তবে ডনেটস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী স্থানীয় কাউন্সিলের সদস্য ভ্লাদিস্লাভ ব্রিগ সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়ান সেন্যরা ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলের উত্তর ও পশ্চিমে অবস্থান নিয়েছে।
বিদ্রোহী অঞ্চলগুলোকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার পুতিনের এই সিদ্ধান্ত প্রায় আট বছরের পুরনো বিচ্ছিন্নতাবাদী সংঘাতকে উস্কে দেয়া হবে। আট বছর আগের সংঘাতে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয় এবং ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস নামের শিল্প কেন্দ্রকে ধ্বংস করা হয়।
২০১৪ সালে ইউক্রেনীয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপ রাশিয়ার অধিগ্রহণের কয়েক সপ্তাহ পরে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেন এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা মস্কোর বিরুদ্ধে সেনা ও অস্ত্র দিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন করার অভিযোগ করেছে। রাশিয়া বরাবরই এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে।
মঙ্গলবার রাশিয়ান পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে যে খসড়া বিল দ্রুত পাশের চেষ্টা করা হচ্ছে, তাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলে রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটিগুলোতে সেনা মোতায়েন সহ সামরিক সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সংকট সমাধানে পুতিনকে আলোচনার প্রস্তাব ইউক্রেনের
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি দেশবাসীকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে রাতে দেয়া এক ভাষণে বলেন, ‘আমরা কাউকে বা কিছুকে ভয় করি না। আমরা কারো কাছে ঋণী নই। এবং আমরা কাউকে কিছু দেব না।’
ইউক্রেনের স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে দেখা করবেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভে এই টুইটে বলেছেন, ‘ক্রেমলিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তার নিজস্ব আগ্রাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’ মস্কোর এই পদক্ষেপকে ‘নতুন বার্লিন প্রাচীর’ হিসাবে বর্ণনা করে এবং পশ্চিমাদের দ্রুত রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আহ্বান জানান তিনি।
হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চলে মার্কিন বিনিয়োগ ও বাণিজ্য নিষিদ্ধ করার জন্য একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে এবং অতিরিক্ত ব্যবস্থা - হিসেবে মঙ্গলবার নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করতে পারে।
অন্যান্য পশ্চিমা মিত্ররাও বলেছে তারা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার পরিকল্পনা করছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনে হামলা চালালে রাশিয়া বাজার ও প্রযুক্তি পণ্য অবরোধের মুখে পড়বে