মধ্য গাজা উপত্যকায় বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় নেওয়া একটি স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছে, যাদের প্রায় সবাই নারী ও শিশু।
বৃহস্পতিবার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে চালানো এই হামলায় আরও ৪২ জন আহত হয়েছেন।
আওদা হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী ১৩ শিশু এবং তিনজন নারী রয়েছেন।
কোনো প্রমাণ ছাড়াই ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তারা স্কুলের ভেতরে হামাস সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
আরও পড়ুন: সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল হামাস
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি স্কুলে তৈরি আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি তারা বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা হামাস সেনাদের লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে। তবে এসব হামলায় প্রায়ই নারী ও শিশু নিহত হয়।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ইসরায়েল হামাসকে 'কার্যকরভাবে ধ্বংস' করার লক্ষ্য অর্জন করেছে এবং যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা শিগগিরই আবার শুরু হবে।
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রধান মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করা ব্লিংকেন কাতারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, আলোচকরা এই আলোচনা আবারও শুরু করবেন।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই অঞ্চলে ১১ বারের মতো সফরে গিয়েছেন ব্লিংকেন।
তিনি বলেন, 'আমাদের দেখতে হবে হামাস এতে জড়িত হতে প্রস্তুত কি না।’
লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল মায়াদিনকে হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওসামা হামদান জানান, তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। কায়রোর মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতি আলোচনা আবারও শুরু হওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে শুনেছেন হামাস প্রতিনিধিরা। তবে গাজায় আক্রমণ বন্ধের পাশাপাশি ওই অঞ্চল থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল- এমন শর্তেই জোর দিচ্ছে হামাস।
গত সপ্তাহে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করার পর যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা আবারও শুরু হবে এমন আশা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু হামাস-ইসরায়েল দুই পক্ষই নিজেদের শর্তের অবস্থানে অনড়।
আরও পড়ুন: লেবাননে বাড়ছে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু ও বাস্তুচ্যুতি
এদিকে অবরুদ্ধ উত্তর গাজায় দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের টানা বিমান ও স্থল আক্রমণে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীরা।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজার উত্তরাঞ্চলে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। সামরিক বাহিনী বলছে, তারা উত্তরাঞ্চলে পুনরায় সংগঠিত হওয়া হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
বুধবার এক ভিডিও বার্তায় উত্তরের কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ড. হোসাম আবু সাফিয়েহ বলেছেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে বা নবজাতক বিভাগে থাকা ১৪ শিশুসহ প্রায় ১৫০ জন আহত ব্যক্তিকে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে এখন যা ঘটছে তার মূল্য দিতে হচ্ছে সবাইকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে গাজায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। ৩৯টি হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ১৬টি হাসপাতাল আংশিকভাবে কাজ করছে।
চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভ্রাট, খাবার ও পানির সংকট পরিস্থিতি আরও বিপর্যস্ত করে দিয়েছে বলে জানান হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে এ পর্যন্ত ৪২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজার ৯০ শতাংশ মানুষ।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারে আলোচনায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল