শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে তার সরকারি বাসভবনে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী হামলা করেছে। শনিবার দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমে এ খবর জানা গেছে।
বিক্ষোভের সময় গোতাবায়া রাজধানী কলম্বোয় অবস্থিত তার সরকারি বাসভবনে অবস্থান করছিলেন নাকি বাইরে ছিলেন তা নিশ্চিত জানা যায়নি। মুঠোফোনে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েক হাজার মানুষ সুরক্ষিত বাসভবনটির বাইরে অবস্থান করছেন।
সরকারের মুখপাত্র মোহনা সেনানায়েকে বলেন, রাজাপাকসে বাসভবনের ভেতরে না বাইরে সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য জানা নেই।
টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, গোতবায়ার বাসভবনের পাশে অবস্থিত তার দপ্তরে কয়েক’শ বিক্ষোভকারী জাতীয় পতাকা হাতে প্রবেশ করে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় তীব্র সংকটের মুখে সরকারের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, শত শত বিক্ষোভকারী ‘গোতা গো হোম’ স্লোগান দিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এসময় ভবনের বাইরের রাস্তার ব্যারিকেড উল্টে দেয়া হয়।
নিরাপত্তারক্ষীরা বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ ও আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩৪ জন আহত হন।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কলম্বোর হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, আহত দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আগের রাতের কারফিউ তুলে নেয়ার পর আশেপাশের শহরতলী থেকে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী শনিবার সকালে রাজধানী কলম্বোয় প্রবেশ করে।
গত কয়েক মাস ধরে চলা এই বিক্ষোভে অংশ নেয়া মানুষের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর দেশের চলমান সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের পেছনে প্রভাবশালী রাজাপাকসে পরিবারের দায় রয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তার পদত্যাগের দাবিতে তিন মাস ধরে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কায় অনির্দিষ্টকালের জন্য স্কুল বন্ধ ঘোষণা
গত মাসে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘তার দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। সংকট থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা জটিল স্তরে গিয়ে ঠেকেছে। কারণ দেশটি দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে।’
গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে তারা বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগতার কথা জানায়। দেশটির বিদেশি ঋণের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২০২৭ সালের শেষ নাগাদ দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলারে ঋণ পরিশোদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পুলিশ শুক্রবার রাতে রাজধানী কলম্বো এবং প্রধান প্রধান শহরে কারফিউ জারি করে এবং শনিবার সকালে সেটি তুলে নেয়া হয়। যদিও দেশটির আইনপ্রণেতা ও বিরোধদলীয় রাজনীতিবিদরা কারফিউকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে আসছে।
শুক্রবার শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জুলি চুং জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করতে বলেছেন এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভের জন্য স্থান ও নিরাপত্তা দেয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
চুং এক টুইটে বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা ও বলপ্রয়োগ অর্থনীতিকে ঠিক করবে না কিংবা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে পারবে না। শ্রীলঙ্কানদের এই মুহূর্তে যা (সবচেয়ে বেশি) প্রয়োজন।’
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন রনিল বিক্রমাসিংহে