জলবায়ু পরিবর্তন প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষাবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ইয়ান ফ্রাই বলেছেন, সারা বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানবাধিকার নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত ও লঙ্ঘিত হচ্ছে।
মানবাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবন, স্বাস্থ্য, খাদ্য, উন্নয়ন, আত্মনিয়ন্ত্রণ, পানি ও স্যানিটেশন, কর্ম, পর্যাপ্ত বাসস্থান ও সহিংসতা, যৌন নির্যাতন, পাচার এবং দাসত্ব থেকে মুক্তির অধিকার।
শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পেশ করা এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন যে উন্নত অর্থনীতির কারণে দরিদ্রতম ও ন্যূনতম মানিয়ে নিতে সক্ষম এমনদের প্রতি বড়ধরনের অবিচার হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ব্যাপকভাবে হ্রাস করার দায়িত্ব নিতে উন্নত অর্থনীতি ও বড় করপোরেশনগুলোর নিষ্ক্রিয়তার জন্য জলবায়ুর যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে জি২০ সদস্য দেশগুলোর কথা বলা যায়। যারা ৭৮ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সত্য আড়ালের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ
ফ্রাই আরও বলেন, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সমাজের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকির কারণ। যার সম্মুখীন বিশ্ব কখনও হয়নি। আর এর কারণে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে দরিদ্র দেশগুলোকে।
নিউইয়র্ক থেকে প্রাপ্ত একটি বার্তা অনুসারে, বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারের প্রতিবেদনটি প্রশমন কাজ, ক্ষয়ক্ষতি, প্রবেশাধিকার ও অন্তর্ভুক্তি এবং জলবায়ু অধিকার রক্ষাকারীদের সুরক্ষার বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করে।
ফ্রাই বলেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর জন্য অপর্যাপ্ত পদক্ষেপের সামগ্রিক প্রভাব একটি মানবাধিকার বিপর্যয় তৈরি করছে এবং এই জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিপর্যয়ের খরচ প্রচুর।
যারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও ক্ষতির শিকার, তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবচেয়ে কম অংশগ্রহণ করতে সক্ষম। এদিকে, শিশু, যুবক, মহিলা, প্রতিবন্ধী, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুসহ এদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য আরও বেশি কাজ করতে হবে।
ফ্রাই জলবায়ু অধিকার রক্ষাকারীদের সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়গুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে পদক্ষেপজনিত অভাবের কারণে ক্রমবর্ধমান হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। জলবায়ু সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা প্রত্যক্ষ করতে তারা বিক্ষোভ ও জনগণের হস্তক্ষেপের দিকে ঝুঁকছে।
এই বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলেন, আদিবাসীরা, বিশেষ করে গুরুতর আক্রমণ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
ফ্রাই ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিতব্য একটি প্রস্তাবিত উচ্চস্তরের প্রশমন প্রতিশ্রুতি ফোরামসহ সাধারণ পরিষদে বেশ কয়েকটি সুপারিশ পেশ করেন। যেখানে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক সুবিধা পরিচালনার জন্য পদ্ধতি ও নিয়মকে সংজ্ঞায়িত করতে অর্থ বিশেষজ্ঞদের একটি পরামর্শমূলক গ্রুপ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকার ও অভিযোগের উল্লেখ আছে, যাতে ক্ষতিগ্রস্থ সম্প্রদায়গুলো প্রয়োজনে আশ্রয় নিতে পারে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের আবারও ‘বাঙালি সম্প্রদায়’ বলল মিয়ানমার
মিয়ানমার বিষয়ক আসিয়ানের বিশেষ দূতকে সু চির সঙ্গে দেখা করার আহ্বান