রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কট্টর সমালোচক এবং কারাবন্দি বিরোধী দলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালনিকে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। স্থানীয় সময় শুক্রবার (৪ আগস্ট) উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তার এই সাজা ঘোষণা করেন একটি রুশ আদালত।
নাভালনি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন অভিযোগে ৯ বছরের সাজা ভোগ করছেন।
অন্যদিকে, নাভালনি তার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে তাকে আজীবন কারাগারে রাখার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
নাভালনির দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম এবং তার ঘনিষ্ট সহযোগীদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
পঞ্চমবারের মতো ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলেন তিনি। এর ফলে তৃতীয় দফায় তার কারাবাস আরও দীর্ঘ হলো।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইনফর্মেশন টেলিগ্রাফ এজেন্সি অব রাশিয়া (ইতার-তাস) জানায়, নাভালনি জালিয়াতি ও আদালত অবমাননার অভিযোগে বর্তমানে সাজা খাটছেন। চলমান সাজার সঙ্গে আরও ১৯ বছরের কারাদণ্ড যোগ করেছেন বিচারক।
আরও পড়ুন: বিষ প্রয়োগে অসুস্থ রুশ নেতা নাভালনিকে চিকিৎসার জন্য জার্মানি প্রেরণ
নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেছেন, তারা আগে থেকেই এই ধরনের রায় দেওয়ার বিষয়টি অনুমান করেছিলেন।
এমনকি নাভালনিও তাকে জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ কারাদণ্ড হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
প্রসিকিউশন তার ২০ বছরের কারাদণ্ডের দাবি করেছিল।
প্যারোল লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালে তাকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
মস্কোর পূর্বাঞ্চলের পেনাল কলোনিতে রুদ্ধদ্বার কারাগারে তার বিচার এবং সাজা ঘোষণা করা হয়েছে।
মামলার শুনানি ও সাজা ঘোষণা করতে বিচারক ১০ মিনিটেরও কম সময় নিয়েছে। অথচ এ ধরনের মামলার রায় ঘোষণায় রাশিয়ায় সাধারণত কয়েক ঘণ্টা, এমনকি সারাদিন কেটে যায়।
পৃথক কক্ষে থাকা সাংবাদিকদের কাছে শুনানিটি সম্প্রচার করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সাজা নিয়ে দলের দেওয়া পোস্টে নাভালনি মন্তব্য করেছেন।
সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সংখ্যা কোনো ব্যাপার নয়।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তান-রাশিয়া নয়া সম্পর্ক: এক দেশভিত্তিক সম্পর্ক আর নয়
তিনি লিখেছেন, আমি বুঝতে পারছি অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দির মতো আমিও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছি। আজীবন অথবা এই সরকারের শাসনকাল পর্যন্ত আমাকে সাজা খাটতে হবে।
নাভালনি তার সমর্থকদের ‘মনোবল না হারানোর’ আহ্বান জানিয়েছেন।’
রায় ঘোষণার বিষয়টি এপিকে নিশ্চিত করেছেন নাভালনির মুখপাত্র ইয়ারমিশ।
তিনি আরও জানান, এ ছাড়াও নাভালনিকে ৫ লাখ রুবল (প্রায় ৫ হাজার ২০০ ডলার) জরিমানা করেছেন আদালত।
তিনি বলেন, কঠোর সাজা সত্ত্বেও নাভালনি আশাবাদী এবং ‘তিনি যা করছেন সে ব্যাপারে পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী।’
নাভালনির নতুন সাজাকে ‘একটি অন্যায় বিচারের অন্যায় উপসংহার’ বলে নিন্দা করেছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। একই সঙ্গে অবিলম্বে তার মুক্তির আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, ‘কয়েক বছর ধরেই নাভালনির মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে ক্রেমলিন। সর্বশেষ এই গোপন বিচার করে এবং কথিত প্রমাণের ভিত্তিতে তার আইনজীবীদের প্রবেশাধিকার সীমিত করে রুশ কর্তৃপক্ষ আবারও তাদের মামলার ভিত্তিহীনতা প্রমাণ করেছে। এর মাধ্যমে যারা সরকারের সমালোচনা করার সাহস করে তাদের জন্য দেশটিতে থাকা আইনের শাসনের অভাবকেও ফুটিয়ে তুলেছে।’
আরও পড়ুন: রাশিয়ার থ্রিডি-প্রিন্টেড রকেট উৎক্ষেপণের পরপরই ব্যর্থ!
৪৭ বছর বয়সী নাভালনি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের চরম শত্রু। কারণ তিনি সরকারি বিভিন্ন দুর্নীতির কথা প্রকাশ করেছেন এবং ক্রেমলিন বিরোধী বিশাল বিক্ষোভের আয়োজন করেছেন।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে জার্মানিতে নার্ভ এজেন্ট বিষক্রিয়া থেকে সুস্থ হয়ে মস্কোতে ফিরে আসার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২১ সালে রুশ কর্তৃপক্ষ নাভালনির দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশন এবং রাশিয়াজুড়ে এর অফিসগুলোর বিশাল নেটওয়ার্ককে চরমপন্থী সংগঠন হিসেবে বেআইনি ঘোষণা করে তার বিচার শুরু করেন।
নাভালনির মিত্ররা বলেছে, চরমপন্থার অভিযোগগুলো ২০১১ সালে তৈরি হওয়ার পর থেকে দুর্নীতিবিরোধী ফাউন্ডেশনের সমস্ত কার্যকলাপকে বিতর্কিত করার চেষ্টা।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, নাভালনির নতুন সাজা ‘রাশিয়ায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিচারিক হয়রানি এবং আদালতের আজ্ঞাবহ রায়ের বিষয়ে নতুন করে গুরুতর উদ্বেগ জাগিয়েছে’।
এ ছাড়াও তিনি নাভালনির মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।