ইউক্রেনের শহর মারিউপোল অবরুদ্ধ করার পর এবার রাশিয়া শহরটির নাগরিকদের আত্মসমর্পনের আহ্বান জানিয়েছে। বিনিময়ে তারা ইউক্রেনীয়দের শহরের বাইরে নিরাপদ স্থানান্তরের ব্যবস্থা করে দেয়া ও হামলা বন্ধ করার আশ্বাস দেয়। তবে ইউক্রেন রাশিয়ার এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেছে।
যুদ্ধের শুরু থেকেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তীব্র লড়াই চলেছে দুই পক্ষের মধ্যে।
রুশ কর্নেল জেনারেল মিখাইল মিজিনসেভ বলেছেন,তারা মারিউপোল শহরের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানান্তরের জন্য দুটো করিডোরের অনুমতি দেবে। একটি পূর্বে রাশিয়ার দিকে, অন্যটি পশ্চিমে ইউক্রেনের অন্যান্য অংশের দিকে।
মারিউপোলের বাসিন্দাদের রাশিয়ার এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার জন্য সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। তারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে রাশিয়া কী ব্যবস্থা নেবে তা এখনও জানায়নি রাশিয়া।
ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশচুক এই প্রস্তাবের জবাবে ‘না’ বলেছেন।
দেশটির প্রাভদা নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ইরিনা বলেন,রাশিয়া অস্ত্র প্রত্যাহারের আত্মসমর্পণ নিয়ে কোনো কথা হতে পারেনা। আমরা ইতোমধ্যে রাশিয়ান পক্ষকে আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমি তাদের কাছে আট পৃষ্ঠার একটি চিঠিতে বলেছি, সময় নষ্ট না করে, করিডোর খুলুন।
বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স ইউক্রেন অনুসারে, মারিউপোলের মেয়র পিওর আন্দ্রুশচেঙ্কোও রাশিয়ার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, রাশিয়ানদের কথার জবাব এবং অভিশাপ দেয়ার জন্য তাকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।
আরও পড়ুন: যুদ্ধের মূল্য রাশিয়াকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দিতে হবে: জেলেনস্কি
এর আগে রাশিয়ার অনুমোদিত নিরাপদ করিডোর দিয়ে মারিউপোল এবং অন্যান্য ইউক্রেনীয় শহরগুলোর বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার অধিকাংশ প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
সোমবার এক ভিডিও ভাষণে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে প্রায় ৪০০ বেসামরিক লোক একটি আর্ট স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল। ওই স্কুলটা রুশ বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা সবাই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। আমরা জানি না তাদের মধ্যে কতজন এখনও বেঁচে আছে।
জেলেনস্কি আরও বলেন, শুধু জানি আমরা নিশ্চিতভাবেই সেই পাইলটকেও গুলি করে হত্যা করব, যে এই বোমাটি ফেলেছে। যেমন আমরা ইতোমধ্যে প্রায় ১০০ জন গণহত্যাকারীকে শেষ করেছি।
জেলেনস্কি সিএনএনকে বলেন, ইউক্রেনীয়রা রুশ সেনাদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়নি, তাদের হাতেও অস্ত্র রয়েছে।’
এদিকে বন্দর নগরী মারিউপোলের কর্মকর্তারা এবং সাহায্যকারী সংস্থাগুলো বলছে, মারিউপোলে খাদ্য, পানীয় এবং বিদ্যুতের অভাব তীব্র হয়ে উঠছে। যুদ্ধের কারণে মানবিক সাহায্য এসেও পৌঁছাতে পারছে না।
শহরটিতে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বোমাবর্ষণ করছে রুশ বাহিনী এবং যুদ্ধের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়েছে এই শহরে।
শহরটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই শহরের অন্তত দুই হাজার ৩০০ জন মানুষ মারা গেছেন। তাদের অধিকাংশকে গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ৯ হাজার মানুষ অবরুদ্ধ মারিউপোল ত্যাগ করেছেন: জেলেনস্কি