ট্রাম্প সমর্থকদের নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবারের মৃত্যুর ঘটনায় ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্টি বলেছেন, নিহতদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। মার্কিন ক্যাপিটল পুলিশের গুলিতে ওই নারী নিহত হন। বাকি তিনজন হাসপাতালে মারা যান।
যা ঘটেছিল ক্যাপিটল হিলে
দিনের শুরুতে হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক 'আমেরিকা বাচাও' নামক একটি গণজমায়েতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।
কয়েক ঘণ্টা ভবন কার্যত দখল করে রাখার পর বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে ক্যাপিটল প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাইরে চলে যেতে থাকে।
পরবর্তীতে রাজধানী ওয়াশিংটনে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১২ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করা হলেও শত শত বিক্ষোভকারীকে রাজপথে জটলা পাকাতে দেখা গেছে।
দুপুরের পরই ওয়াশিংটনে নাটকীয় দৃশ্যে দেখা যায়- শত শত বিক্ষোভকারী ভবনটিতে ঢুকে পড়ছে আর পুলিশ কংগ্রেস সদস্যদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছে।
আরও পড়ুন: জো বাইডেন হলেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট
জো বাইডেন ঘটনাকে একটি 'বিদ্রোহ' বলে আখ্যায়িত করেন, আর ট্রাম্প একটি ভিডিও বার্তায় তার সমর্থকদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করেন।
এই শোরগোলের মধ্যে বাইডেনের জয় অনুমোদন করার জন্য কংগ্রেস অধিবেশন স্থগিত করা হয়। এটি ছিল আমেরিকার সংসদের দুই কক্ষ- হাউস অফ রেপ্রেসেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি সভা এবং সেনেট-এর যৌথ অধিবেশন।
কংগ্রেস নেতারা বলছেন, ক্যাপিটল ভবন নিরাপদ হওয়ায় স্থানীয় সময় রাত ৮টায় তারা যৌথ অধিবেশন আবার শুরু করবেন এবং জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করবেন।
'নজিরবিহীন আক্রমণ'
ট্রাম্প তার ভিডিওতে তার সমর্থকদের বাড়ি ফেরার অনুরোধ করলেও তিনি আবারও দাবি করেন জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাট দল নির্বাচন চুরি করেছে যদিও তিনি কোনো প্রমাণ দিতে পারেন নি।
সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তোমাদের বেদনা বুঝি, আমি জানি তোমরা কষ্ট পেয়েছ।তোমাদের এখন বাড়ি ফিরতে হবে, আমাদের শান্তি দরকার, আমরা চাইনা কেউ আহত হোক।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের আমাদের কাছে শেখার আছে: সিইসি
অপরদিকে, ‘আমাদের গণতন্ত্র এক নজিরবিহীন আক্রমণের মুখে’ উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেন, ‘এই বিক্ষোভ একটি বিদ্রোহের সমতুল্য এবং এখনই তার অবসান হওয়া উচিত।’
বিশ্ব নেতাদের নিন্দা
যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের ঢুকে পড়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। তারা বিস্মিত ও স্তব্ধ হওয়ার প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক দৃশ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে ‘শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল ক্ষমতা হস্তান্তরের’ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রথম দিনেই তুলে নেবেন বাইডেন
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেন, ‘ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের উচিত শেষ পর্যন্ত আমেরিকার ভোটারদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া এবং গণতন্ত্রের পদদলন না করা।’
এক বিবৃতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেন, ‘এটা পুরোপুরি অসুস্থ এবং হৃদয়বিদারক দৃশ্য। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল কোনো দেশে এ ধরণের ঘটনার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলকে বিতর্কিত করা হয়- আমাদের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে এর কোনো স্থান নেই।’
এক বিবৃতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ইতিহাস সঠিকভাবেই ক্যাপিটলের উপর এই আক্রমণকে মনে রাখবে, আর সেটি হচ্ছে ‘এই মুহূর্তটি প্রচণ্ড অসম্মান এবং এই জাতির জন্য লজ্জাজনক।’
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘গণতন্ত্রের উপর এই আঘাতের ঘটনায়’ ‘কানাডিয়ানরা প্রচন্ড বিরক্ত’।আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্ন্দান্দেজ জো বাইডেনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং সহিংসতার ঘটনার প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।
একইভাবে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দোকে সহিংসতাকে প্রত্যাহার করে কংগ্রেসের সদস্যদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনেরা ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপের’ নিন্দা জানিয়েছেন।