ভাঙা নৌকায় ভেসে বেড়ানো ১২০ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীকে উদ্ধার করে বন্দরে পৌঁছে দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর একটি জাহাজ। গত কয়েকদিন আগে আচেহ প্রদেশ থেকে এই শরণার্থীদের নিয়ে নৌকাটি রওনা হয়।
বৃহস্পতিবার দেশটির নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শরণার্থীবাহী কাঠের নৌকাটি গত কয়েকদিনে ভেঙে যায় এবং নৌকাটির ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়।
বুধবার ইন্দোনেশিয়ার সরকারি এক বিবৃতিতে জানানো হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তারা কূলে ভিড়তে অনুমতি দিচ্ছে। কারণ নৌকাটির অবস্থা খুবই খারাপ এবং এর যাত্রীদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
যদিও এর আগের দিন মঙ্গলবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, নৌকায় থাকা ১২০ রোহিঙ্গাকে তারা খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহ করবেন। তবে আন্তর্জাতিক অনুরোধ রেখে তাদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হবে না।
আরও পড়ুন: ভাসানচর থেকে পালানোর সময় রোহিঙ্গা নারীর মৃত্যু
নৌবাহিনীর ওয়েস্টার্ন ফ্লিট কমান্ডের মুখপাত্র কর্নেল লা ওডে এম হোলিব জানিয়েছে, ভাঙা নৌকাটিকে বৃহস্পতিবার ভোরে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ আচেহ জেলার বিরুয়েন উপকূল থেকে প্রায় ৫৩ মাইল (৮৫ কিলোমিটার) দূরের লোকসেউমাওয়ে জেলার একটি বন্দর; ক্রুয়েং গেউকেহের দিকে নিয়ে যায়।
কর্নেল হোলিব আরও বলেন, তীব্র ঢেউ ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাদের উদ্ধার অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে, তারা আশা করছে আজকের আবহাওয়ার উন্নতির ফলে নিরাপদে শরণার্থীদের উদ্ধার করতে পারবে।
স্থানীয় উপজাতীয় মাছ ধরা সম্প্রদায়ের নেতা বদরুদ্দিন ইউনুস বলেন, স্থানীয় জেলেরা রবিবার প্রথমে নৌকাটি বিরুয়েনের উপকূল থেকে প্রায় ৬০ মাইল (৯৬ কিলোমিটার) দূরে ভাসতে দেখেছিল।
তিনি আরও বলেন, জেলেরা ৬০ জন নারী, ৫১ জন শিশু ও ৯জন পুরুষসহ যাত্রীদের খাবার, পানি ও কাপড় সরবরাহ করেছে। ভাসমান রোহিঙ্গারা জানিয়েছিল তারা মালয়েশিয়া যেতে চায়, নৌকার ইঞ্জিন বিকল হওয়ার আগে তারা ২৮ দিন ধরে সমুদ্রে ভাসছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পক্ষে একা রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেয়া উচিত না: জাতিসংঘ
অন্যদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়ার প্রতি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। সেসময় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করেছিল। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর প্রতি গণধর্ষণ, হত্যা এবং হাজার হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির ছেড়ে সমুদ্রপথে প্রাণ ঝুঁকি নিয়ে অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে মুসলিম-অধ্যুষিত মালয়েশিয়া তাদের কাছে জনপ্রিয় একটি গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া পাচারকারীরাও মালয়েশিয়ায় তাদের উন্নত জীবন-যাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাচার করছে। কিন্তু বাস্তবে মালয়েশিয়ায় এসে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী বন্দি জীবন কাটাচ্ছে।