বিশ্বের ৭০০ কোটির বেশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে মাত্র ১৭ শতাংশ অর্জন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। শুক্রবার (২৮ জুন) সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেন, 'এতে দেখা যাচ্ছে বিশ্ব জীবনমান উন্নয়নে ব্যর্থ হচ্ছে।
২০১৫ সালে বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচন থেকে শুরু করে লিঙ্গ সমতা অর্জন পর্যন্ত ১৭টি সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছিলেন বিশ্ব নেতারা। এই দশকের শেষ নাগাদ পৌঁছাতে ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: বিশ্ব ‘পরমাণু বিপর্যয়ের’ থেকে এক ধাপ দূরে: জাতিসংঘ মহাসচিব
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার প্রায় অর্ধেক বিষয়ে ন্যূনতম ও মাঝারি অগ্রগতি দেখা গেছে। এছাড়া এক-তৃতীয়াংশের বেশি স্থবির বা পিছিয়ে গেছে এবং মাত্র ১৭ শতাংশ অর্জনের পথে রয়েছে।
গুতেরেস বলেন, 'বিষয়টি সহজ। শান্তি নিশ্চিত, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এবং আন্তর্জাতিক অর্থায়ন জোরদারে আমাদের ব্যর্থতা উন্নয়নকে ব্যাহত করছে।’ প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ মহামারির দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালে অতিরিক্ত ২ কোটি ৩ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে এবং ১০ কোটির বেশি মানুষ অনাহারে ভুগছে।
গুতেরেস বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত সম্পদ, জ্ঞান ও প্রযুক্তির এই বিশ্বে বহু মানুষকে মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত করা নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।’
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই শতাব্দীতে প্রথমবারের মতো, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অর্ধেক দেশে মাথাপিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি উন্নত অর্থনীতির তুলনায় ধীর, যা সমতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সংস্থাটি বলছে, ২০২২ সালে প্রায় ৬০ শতাংশ দেশ মাঝারি থেকে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের মুখোমুখি হয়েছে।
মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন অনেক দূরে রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী মাত্র ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষে পড়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করেছে।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক মূল্যায়নে অনেক দেশে গণিত এবং পড়ার স্কোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।’
লিঙ্গ সমতা সম্পর্কে এতে হলা হয়েছে, বিশ্ব এখনও পিছিয়ে রয়েছে। প্রতি পাঁচজন মেয়ের মধ্যে একজন এখনও ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে করে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে, অনেক নারীর তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই এবং বর্তমান হারে ব্যবস্থাপনা পদে পুরুষদের সঙ্গে সমতায় পৌঁছাতে নারীদের ১৭৬ বছর সময় লাগবে।
গুতেরেস বলেন, এই প্রতিবেদনে 'কিছু আশার আলো' রয়েছে।
মোবাইল ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে বিশ্বের জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশের প্রবেশডেগ্যতা রয়েছে। ২০১৫ সালে এটি ছিল ৭৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নবায়নযোগ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বৈশ্বিক সক্ষমতা গত পাঁচ বছর ধরে নজিরবিহীনভাবে বার্ষিক ৮.১ শতাংশ হারে বাড়ছে।
আরও পড়ুন: কানেকটিভিটি উচ্চতর পর্যায়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করছে ঢাকা-দিল্লি: কর্মকর্তা
চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধির ফলে গত তিন দশকে এইডস-সম্পর্কিত ২ কোটি ৮ লাখ মৃত্যু এড়ানো গেছে। ম্যালেরিয়ার নতুন টিকা লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে সক্ষম। বেশিরভাগ অঞ্চলে মেয়েরা এখন শিক্ষায় ছেলেদের সঙ্গে সমতা অর্জন করছে। আর অনেক নারী এখন প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করছেন।
তবে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের গতি ও মাত্রা এখনও অনেক ধীর।
গাজা থেকে ইউক্রেন, সুদান ও এর বাইরেও যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং ধ্বংস ও যুদ্ধের ব্যয় থেকে জনগণকে রেহাই দিতে এবং শান্তিতে বিনিয়োগের দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মহাসচিব জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং 'সবুজ ও ডিজিটাল রূপান্তর' বিষয়ে বৃহত্তর পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগে বার্ষিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের ব্যবধান রয়েছে।
গুতেরেস সম্পদ সরবরাহের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করার এবং ঋণের চাপ ও ঋণ পরিশোধের ব্যয় হ্রাস, নগদ প্রবাহ সংকটের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য আপদকালীন অর্থায়নের প্রবেশযোগ্যতা প্রসারিত করা এবং বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বহুগুণ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্যের অবসান, পৃথিবীকে রক্ষা এবং কাউকে পেছনে ফেলে না রাখার বিষয়ে আমাদের অঙ্গীকার থেকে সরে আসা উচিত হবে না।’