বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বন্দরে মোট ৪২টি শেড রয়েছে। প্রতিটি শেডে ট্যান্ডল নামে বহিরাগত একজন করে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে অবৈধভাবে। যারা সরাসরি রাজস্ব ফাঁকি ও শেড থেকে মালামাল চুরির সাথে জড়িত।
জানা গেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ২০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষও আলাদা রাজস্ব পায়। অথচ আমদানিকৃত এসব পণ্যের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। প্রতিনিয়ত পণ্য চুরি হচ্ছে বন্দর থেকে। ঘটছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও।
আরও পড়ুন: বেনাপোল বন্দরকে ঘিরে সক্রিয় শক্তিশালী চোরাচালান সিন্ডিকেট
বেনাপোল কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারত থেকে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন পণ্য এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন পণ্য।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ৯৯৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।
বন্দরের প্রতিটি ফটকে নিরাপত্তা কর্মীরা দায়িত্বে থাকার পরও অবাধে প্রবেশ করছে বহিরাগত লোকজন। বন্দর একটি বন্ডেড কেপিআইভুক্ত এলাকা সত্ত্বেও কীভাবে বন্দরে অবৈধ লোকজন প্রবেশ করছে তা নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে অভিযোগ করা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছে না অভিযোগ রয়েছে।
গত ১৭ ডিসেম্বর বেনাপোল কাস্টমস হাউজে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক পরামর্শক কমিটির সভায় বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো বন্দরে অবৈধ লোকজনের অবাধ যাতায়াত করার বিষয়ে অভিযোগ করে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত এসব অবৈধ লোকজনকে শেড থেকে সরাতে পারেনি। ফলে আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা যে কোনো সময় বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছে।
আরও পড়ুন: করোনা: নেগেটিভ সনদ না থাকায় ভারতফেরত ৩৩ জন কোয়ারেন্টাইনে
বেনাপোলে সোনা চুরি: সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার ২ দিনের রিমান্ড
বেনাপোল আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ জানান, বন্দরে বহিরাগতরা মালামাল চুরি করছে। বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন তরফদারের ছত্রছায়ায় বন্দর থেকে মালামাল চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
লতিফ বলেন, ‘বন্দরের শেড থেকে আমার ৫টি চালানের মালামাল চুরি হয়েছে, তার মধ্যে গতমাসে ক্রাউন সিমেন্ট কোম্পানির আমদানি করা মেশিনের একটি মোটর খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা। যার মূল্য ১২ লাখ টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।’
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন, ‘বন্দরের ভেতর অবৈধ লোকজন শেডে থাকা ঠিক না। আমরা বিভিন্ন সময়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছি, কিন্ত বন্দরের উপপরিচালক মামুন তালুকদারের অসহযোগিতার কারণে বহিরাগত লোকজননের যাতায়াত ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং তার প্রশ্রয়ে বন্দরে বিভিন্ন শেডে এসব অবৈধ লোকজন রাখা হয়েছে যার কারণে বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে।’
বেনাপোল বন্দরের পিওনের লাশ উদ্ধার
ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, ‘বেনাপোল বন্দর হলো অর্থনীতির অন্যতম প্রধান মাধ্যম। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সিংহভাগ সম্পন্ন হয় এ বন্দরের মাধ্যমে। বন্দরের বহিরাগত অবৈধ লোকজনের অবাধ যাতায়াত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত।’
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, ‘বন্দরে অবাধে বহিরাগত লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বন্দরের শেডের অভ্যন্তরে কোনো অবস্থাতেই বহিরাগত ট্যান্ডল রাখা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব এসব নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মালামাল চুরির বিষয়ে কোনো অভযোগ পাওয়া যায়নি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’