সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি যে শহরে অবস্থিত তার পরিবেশও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই ধারাবাহিকতায় সমগ্র দেশের অবস্থা সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলে শিক্ষার পরিবেশের ওপর। চাকরি বা ব্যবসায়িক কার্যক্রমের সহজলভ্যতার সঙ্গে শিক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল ও উন্নত ক্যারিয়ারের বিষয়টি সম্পৃক্ত। এই সুবিধাটিই আরও বহুগুণে বেড়ে যায় যখন একাধিক দেশে ভ্রমণের সুযোগ থাকে। মূলত এই কারণেই উন্নয়নশীল দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা পাড়ি জমান শেনজেনভুক্ত দেশ হাঙ্গেরিতে। বিগত কয়েক বছর ধরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অফুরন্ত সম্ভাবনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশটি। চলুন, হাঙ্গেরিতে কোন বিষয়ে চাকরির বাজার ভাল, আবেদন পদ্ধতি ও পড়াশোনার খরচসহ যাবতীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
উচ্চশিক্ষার জন্য কেন হাঙ্গেরি বেছে নিবেন
হাঙ্গেরিতে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই যে আকর্ষণীয় বিষয়টি আসে, তা হলো তুলনামূলক স্বল্প খরচে উচ্চমানের শিক্ষা লাভ। কিউএস র্যাংকিংয়ে দেশটির সেজেড ইউনিভার্সিটি রয়েছে ৬০১ নম্বর অবস্থানে। ডেব্রেসেন ইউনিভার্সিটির অবস্থান ৬৭১, ইওত্ভস লোর্যান্ড ইউনিভার্সিটি ৭০১, বুদাপেস্ট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইকোনমিক্স ৭৪১ ও পেচ ইউনিভার্সিটি ৮০১-এ।
জীবনযাত্রার ব্যয়ভারের দিক থেকেও আধুনিক দেশটি ইউরোপের সবচেয়ে অল্প খরচের দেশগুলোর একটি। যেমন বুদাপেস্টে থাকার খরচ প্রাগ, জুরিখ, মাদ্রিদ ও এথেন্সের মতো শহরগুলোর তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কম। তাই বাজেট সচেতন মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য হাঙ্গেরি সেরা বিকল্প।
এ ছাড়া ক্রাইম ইনডেক্সে প্রতি লাখে ৩৩ দশমিক ৮ হওয়ায় নিরাপদ দেশ হিসেবে ইউরোপের সেরা দেশগুলোর মধ্যে হাঙ্গেরি একটি। সেই সাথে বৈচিত্র্যময়, ঐতিহ্যপূর্ণ, এবং বহুসংস্কৃতির দেশটি অমূল্য অভিজ্ঞতার হাতছানি দেয় বিদেশি শিক্ষার্থীদের। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ও শেনজেনভুক্ত দেশ হিসেবে ইউরোপ ভ্রমণসহ ক্যারিয়ারের অফুরন্ত সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়।
আরো পড়ুন: ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষার যোগ্যতা
উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের হাঙ্গেরিকে নির্বাচন করতে হলে কিছু পূর্বশর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো হলো-
• আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য হাই স্কুল ডিপ্লোমা বা সমমানের একাডেমিক ডিগ্রি
• গ্রাজুয়েশনের জন্য স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি
• পিএইচডির জন্য স্নাতকোত্তর বা সমমানের ডিগ্রি
• মেডিসিন, ফার্মেসি, দন্তচিকিৎসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, আইন, মনোবিজ্ঞান এবং তথ্যবিজ্ঞানের মতো প্রোগ্রামগুলোর জন্য নির্দিষ্ট প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
• ভাষাগত দক্ষতার ক্ষেত্রে, আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য টিওইএফএল স্কোর লাগবে ৭২, স্নাতকের জন্য ৭৯, এবং পিএইচডির জন্য ৯০। আইইএলটিএস স্কোর আন্ডারগ্রাজুয়েশনের জন্য ৫.৫, স্নাতকের জন্য ৬.০, এবং পিএইচডির জন্য ৬.৫।
হাঙ্গেরি ভাষা দক্ষতা বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরি এবং পরবর্তীতে পড়াশোনা শেষে ভালো চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াবে।
হাঙ্গেরি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ বছরের স্টাডি-গ্যাপ পর্যন্ত অনুমতি দেয়। তবে কমপক্ষে ১২ বছরের অধ্যয়ন (উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত) সময়সীমা সম্পন্ন করা আবশ্যিক।
আরো পড়ুন: সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য হাঙ্গেরির সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ও কোর্স
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাঙ্গেরির প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-
• সেজেড ইউনিভার্সিটি
• ডেব্রেসেন ইউনিভার্সিটি
• ইওত্ভস লোর্যান্ড ইউনিভার্সিটি
• বুদাপেস্ট ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইকোনমিক্স
• পেচ ইউনিভার্সিটি
• করভিনাস ইউনিভার্সিটি অব বুদাপেস্ট
• হাঙ্গেরিয়ান ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস
• জ্যাকেনি ইস্ত্ভান ইউনিভার্সিটি
• মিশ্কল্ট্স ইউনিভার্সিটি
• প্যানোনিয়া ইউনিভার্সিটি
আরো পড়ুন: সুইডেনে স্কলারশিপ পাওয়ার কিছু উপায়
বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়োগের ভিত্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন বিষয়গুলো হলো-
• তথ্যবিজ্ঞান
• তথ্য প্রযুক্তি
• আইন
• ন্যাচারাল সায়েন্স
• চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান
• ব্যবসা ও অর্থনীতি
• স্থাপত্য
• প্রকৌশল
• মেডিসিন
• দন্তচিকিৎসা
• ব্যবসায় প্রশাসন
আরো পড়ুন: জার্মানিতে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়