সরকার চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) আট লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে বিদেশে পাঠানোর এবং পাঁচ লাখ ২০ হাজার কর্মীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা করেছে।
এছাড়াও, বৈদেশিক চাকরির বাজারের চাহিদা মেটাতে আরও বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিতে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১০০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ সেন্টার চালু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একটি সরকারি নথি অনুসারে, কর্মীদের দক্ষতা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া ও বিদেশে তাদের আরও ভাল চাকরি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
এই লক্ষ্যে, কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও মেরিন প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সব ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গত অর্থবছর (২০২১-২২) থেকে জাতীয়, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক যোগ্যতা ফ্রেমওয়ার্ক (এনটিভিকিউএফ) এর অধীনে পরিচালিত হয়।
আরও পড়ুন: দুর্বল ১০ ব্যাংককে রক্ষায় চুক্তি হচ্ছে
বিদেশের শ্রমবাজারে তাদের (বাংলাদেশি শ্রমিকদের) আয় বাড়ানোর জন্য রিকগনিশন অব প্রায়োর লার্নিং (আরপিএল) কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ৪৩টি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে (টিটিসি) বিদেশি ভাষা শেখানোর কোর্স চালু রয়েছে।
এ ছাড়া, অভিবাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনার জন্য তিনটি নতুন অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে- ‘এমপ্লয়ি কানেক্টিভিটি রিপোর্টিং সিস্টেম’, ‘অনলাইন গ্রিভেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ ও ‘রিক্রুটিং এজেন্সি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আরএআইএমএস)’।
প্রবাসী শ্রমিক ও বিদেশ থেকে ফেরত শ্রমিক উভয়ের কল্যাণে সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
নিয়মিতভাবে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অভিবাসন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সেক্টরটিকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল করা হয়েছে। যেমন- কর্মচারী নিয়োগের জন্য পেশাদার ডাটাবেস তৈরি করা; মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ভিসা ফরম যাচাই করা; অভিযোগ গ্রহণের জন্য পৃথক পোর্টাল এবং ‘জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’ (বিএমইটি) এর স্বয়ংক্রিয় কার্যক্রম।
দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের পুনঃসংহতকরণের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি কার্যক্রম চলছে এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহজ শর্তে বিনিয়োগ ঋণ প্রদান, প্রবাসীদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদান এবং প্রতিবন্ধী প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরে আসার সময় চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
সারাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অনুপ্রাণিত করার জন্য পর্যায়ক্রমে প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
নথিতে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ৩৬.১০ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স থেকে আয় কিছুটা কমেছে।
আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকার ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে প্রণোদনার হার ০.৫ শতাংশ পয়েন্ট থেকে ২.৫ শতাংশ করেছে।
এছাড়া সরকার পাঁচ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্সের বিপরীতে নগদ প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে রেমিটেন্স পাঠানো ব্যক্তিদের উপার্জনের নথি জমা দেয়ার বাধ্যতামূলক বিধান প্রত্যাহার করেছে।
নথিতে আরও বলা হয়েছে, আশা করা হচ্ছে শিগগিরই রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক অবস্থায় ফিরে আসবে।
২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসা দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ১৮ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠানো হয়েছিল।
এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি দেশের বাইরে বসবাস করছেন এবং কাজ করছেন, যার বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্যে বাস করেন। তৈরি পোশাক রপ্তানির পর এটি দেশের দ্বিতীয় বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রাপ্তির খাত।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র গত বছরই তারা ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে।
বিএমইটি এর মতে, শুধুমাত্র ২০১৯ সালে, সাত লাখেরও বেশি অভিবাসী শ্রমিক বিদেশে কর্মসংস্থানের সন্ধানে দেশ ছেড়েছেন এবং ৭৩ শতাংশেরও বেশি রেমিট্যান্স উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলভুক্ত দেশসমূহ থেকে পাঠানো হয়েছিল।
বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ সরাসরি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি লাইফলাইন হিসেবে কাজ করে।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশনের পরামর্শ মতে, শিক্ষা ও দক্ষতার উন্নতিতে বিনিয়োগ করা উচিত। যাতে স্বল্প-দক্ষ অভিবাসী শ্রমিকেরা আরও বেশি উপার্জন করতে পারে এবং ঋণের চক্র ভেঙে বাইরে আসতে পারে।
আরও পড়ুন: দেশে কাতারের বিনিয়োগ চায় ঢাকা