যেতে যেতে কত স্মৃতি, কত কথা মনে পড়ছে! জামিল ভাইয়ের সাথে পরিচয়টা আমার ছাত্র জীবন থেকেই। মূলত, তিনি আমার বড় ভাইয়ের বন্ধু। সেই সুবাদে আমার বড় ভাই। ৪০-৫০ বছরের পারিবারিক যোগাযোগ আমাদের। আজও মনে আছে, আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের প্রারম্ভে যখন আমি গৃহছাড়া তখন আশ্রয় হয়েছিল তার বাসায়। স্বামীবাগের চিলকোটায় থাকতেন তিনি। আমাকে অনেক কিছু বোঝালেন প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক মানুষটি। দেশের প্রতি এত ভালবাসা তার! প্রতিটি মুহূর্ত তার দেশের উন্নয়ন ও পরিকল্পনায় কেটেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই হবে- এ কথাটি আমাকে সেদিনই বলেছিলেন।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করব না, বড় ভাইয়ার কাছে এ কথাটি শুনতে পেয়ে রাতে এসে হাজির আমাদের বাসায়। অভিভাবকের মতো প্রশ্ন করে বললেন, ‘কেন তুমি বাংলাদেশে থাকবে না? এ দেশ তো সবার, এখানে মেধা মননের প্রয়োগ করলে তুমি হবে সবচেয়ে সম্মানিত। তোমার মেধার অংশীদার হবে দেশের হাজার হাজার তরুণ।’ আমার আর যাওয়া হয়নি, তার কথা মতোই যোগদান করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্রমেই দিন যায়, সময় যায়- যখন যে সমস্যায় পড়েছি, প্রথম ফোনটি করেছি জামিল ভাইকে। সাথে সাথেই সমাধান। প্রতিটি ঘটনার এত গভীরে ঢোকার মতো ক্ষমতা আর কারও মাঝে আমি দেখিনি। আমি যেবার সাইন্স একাডেমির দায়িত্ব পেলাম, জামিল ভাই আসলেন আমাদের মিটিংয়ে। এখানে অভিভাবকের মতো দাঁড়ালেন পাশে। এরপর বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হলে সেখানেও বড় ভাই, অভিভাবকের মতো আমি সাথে পেলাম তাকে। বিএসি'র খণ্ডকালীন সদস্য হলেন তিনি। পুরো বিশ্বের একাডেমিক সিস্টেম তার মাথায়। আমি অবাক হই এ একটি মানুষ এত কিছু জানেন কেমন করে, এত গভীরে যান কেমন করে? এক বছরে বেশ কয়েকটি মিটিং করেছি আমরা। সর্বশেষ, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেও কথা হয় আমাদের। কোভিড-১৯-সহ বিশ্বের অনেক কিছু নিয়েই আলাপ হলো আধা ঘণ্টা। শেষে বললেন, বাড়ির বাইরে বের হবে না কিন্ত!
বিশ্বাস করুন জামিল ভাই, আমি বাড়ি থেকে আর বের হইনি। চেষ্টা করেছি ঘরে থাকতে। কিন্তু আজ সব নিয়ম ভেঙে আপনাকে শেষবারের মতো দেখতে যাচ্ছি। সব কিছু এত বিমর্ষ লাগছে কেন?
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল, মহাখালি, ঢাকা।